চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরকারি দুই পদে দেড়যুগ ধরে একইব্যক্তি

সেই প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

সরকারি দুই পদে দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে চাকরি করা সেই প্রধান শিক্ষক অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুদকের হাতে। সরকারি দুই পদে চাকরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের দায়ে রফিকুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি টিম। গতকাল (রবিবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত কারাগারে পাঠানার নির্দেশ দেন।

জানা যায়, একইদিন সকাল সাড়ে দশটায় এ বিষয়ে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মু. জাফর সাদেক শিবলী। মামলা নং- (৩)১৩/১০/১৯। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন মামলাটি রেকর্ড করেন। এরপরেই অভিযান চালিয়ে তাকে আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত ৫ সেপ্টম্বর ‘দুই সরকারি পদে দেড় যুগ ধরে একই ব্যক্তি’ শিরোনামে দৈনিক পূর্বকোণে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলাম আনোয়ারা উপজেলার চুন্নাপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলার উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি।

দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে সচিব হিসেবে যোগদান করেন রফিকুল ইসলাম। এরমধ্যে ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট মাসে তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আনোয়ারা উপজেলার সরস্বতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চুনতি ইউনিয়নে তিনি সচিব হিসেবে যোগদান করলেও এরমধ্যে তিনি বদলি হয়ে আনোয়ারা উপজেলার ৫ নং বরুমছড়া ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবছর সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি মীরসরাই উপজেলাধীন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত ছিলেন। তবে তিনি হিঙ্গুলী ইউনিয় পরিষদে সচিবের দায়িত্ব থেকে ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি নিলেও ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট থেকে তিনি শিক্ষকতা করে আসছেন।

তথ্য অনুসারে, তিনি ২০০১ সালের ২৯ আগস্টে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ২০০৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু এর একমাস আগে তথা একই বছরের ২৩ জানুয়ারিতে আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ জুইদ-ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে একই উপজেলার উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে বর্তমানে সেখানে তিনি কর্মরত রয়েছেন।

এ বিষয়ে দুদকে অভিযোগ আসার পর অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। অনুসন্ধান শেষে বিষয়টির সত্যতা পাওয়ায় দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী মামলা রুজুর অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। এরমধ্যে গত ১ অক্টোবর দুদক কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫) মো. আনোয়ারুল হক মামলা দায়েরর অনুমতি দেন।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মু. জাফর সাদেক শিবলী এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক বিশ^াসভঙ্গ করে একই সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে কর্মরত থেকে দ-বিধি’র ৪০৯ ধারা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বিধায় প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদ চাওয়া হয়। অনুমোদন আসার পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানকালে দেখা যায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন পরিষদের পদে থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬৫ টাকা অসৎ উপায়ে আত্মসাত করেছেন। তবে সরকরি নীতিমালা অনুযায়ী একইব্যক্তি দুই জায়গায় চাকরি করতে পারেন না। তবে সরকারি এমন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই তিনি এতদিন এ কাজ করেছেন বলেও প্রমাণ মিলেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট