চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

নৌ-বাণিজ্য এখন কেবলই স্মৃতি

মিজানুর রহমান

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

এক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ডলু নদী হয়ে জাহাজ ভিড়তো ডলু ব্রিজের বাদশা মিঞা ও কালু মিঞার ঘাটে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দখল-দূষণে মরে গেছে নদীটি। পানিশূন্য হয়ে জেগে উঠেছে চর। বিভিন্ন স্থানে দখল-দূষণে মৃত প্রায়ই নদী। অথচ কেউ শুনছে না নদীর কান্না।

 

আনোয়ারার ইছামতি খাল ছিল শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। সেখানে নিয়মিত চলতো আনোয়ারা-চাক্তাই-ফিরিঙ্গীবাজার লঞ্চ সার্ভিসও। তবে স্লুইচগেট নির্মাণ আর কারখানার বর্জ্যে খালে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচল।

 

শুধু ডলু নদী বা ইছামতি খাল নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে নৌবাণিজ্য সম্প্রসারণে ভ‚মিকা রাখা এমন অর্ধশতাধিক খাল এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। দখল-দূষণের কারণে খালগুলোতে আর বড় নৌযান চলতে পারছে না। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখা এসব খাল ঘিরে নৌবাণিজ্য এখন প্রায়ই বন্ধ।

 

চন্দনাইশের ৪৭ খাল অস্তিত্ব সংকটে :
দীর্ঘসময় পুনঃখনন ও সংস্কারের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে চন্দনাইশের ৪৭ খাল। এসব খাল অনেক জায়গায় দখল করে নিয়েছেন পাশের জমির মালিকেরা। পাশাপাশি খালে ময়লা-আর্বজনা ফেলে পরিবেশ বিনষ্ট করলেও দেখার যেন কেউ নেই। এতে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার জেলে পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজমল হোসেন বলেন, পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদীখননের উদ্যোগ নিতে হবে। চন্দনাইশে ১টি নদী ও ৪৭টি খাল রয়েছে। অধিকাংশ খাল দীর্ঘসময় ধরে সংস্কার না হওয়ার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় বেদখলের দৃশ্যও চোখে পড়ে। সরকার খালগুলো সংস্কার করে পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

খরস্রোতা ছয় খাল এখন মৃত:
দখল, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, খাল খনন প্রকল্পে অনিয়ম ও খালে বাঁধের কারণে আনোয়ারার একসময়ের খরস্রোতা ছয়টি খাল এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। খালগুলো হচ্ছে- ইছামতি খাল, সাপমারা খাল, শাহ মোহছেন আউলিয়া খাল, কেয়াগড় কান্দুরী খাল, ইজারা বিলের সংযোগ খাল ও শ্রীমতি খাল। এতে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকেরা।

 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক বলেন, মরা খালগুলো মাছ চাষের ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু তা আর কার্যকর হয়নি। এসব খাল দখল-দূষণমুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার।

 

‘অস্থিত্বহীন’ কর্ণফুলীর শাখা খাল :
দখল আর দূষণে কর্ণফুলীর শাখা খালগুলো অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। খাল ভরাট করে কোথাও বাড়িঘর, কোথাও টয়লেট, কোথাও মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বাদামতল খাল। অন্যদিকে ডেইরি ফার্মের বর্জ্যে ভরে গেছে শিকলবাহার খাল। প্রশাসন নির্বিকার থাকায় এসব খালের এমন পরিণতি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

 

১০ বছরে ভরাট অর্ধশতাধিক পুকুর :
অসংখ্য ছোট-বড় পুকুর আর দীঘির অবস্থান পটিয়ায়। তবে ক্রমাগত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির মূল্যবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা নির্মাণসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এসব পুকুর ও দীঘি। গত ১০ বছরেই ভরাট হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুর। দ্রুত জলাশয়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।

 

সড়ক নির্মাণে কাটা অর্ধশত পাহাড় :
বোয়ালখালীর জৈষ্ঠ্যপুরার পাহাড়ি অঞ্চল বন্যহাতির অবাধ বিচরণক্ষেত্র। ভাণ্ডালজুড়ি খাল ও পাহাড়ি ছড়া থেকে বন্যহাতির পাল সুপেয় পানির চাহিদা মেটায়। তবে জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা পর্যন্ত ছড়া ও পাহাড়ের কোলঘেঁষে সড়ক নির্মাণের কারণে কাটা পড়েছে প্রায় ৪৫টি ছোট-বড় পাহাড়। ফলে এ অঞ্চলে বেড়েছে মানুষের বিচরণ, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।

 

পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের বাস :
মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে এসে সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসবাস করছে। এদের কেউ কেউ বন বিভাগের পাহাড় দখল করে কেটে স্থানীয় কিছু দখলদারের যোগসাজশে গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গা কলোনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, রোহিঙ্গারা পাহাড় কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট