চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

ছাত্র আন্দোলনে গুলি: সাংবাদিক নির্যাতনকারী রুপক নাথ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী এবং সাংবাদিক নির্যাতনকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য রুপক কান্তি নাথকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের আরেক সক্রিয় সদস্য ইসরাত আশরাফি অপিকে (২৪)।

 

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬ টায় নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন।

 

গ্রেপ্তার রুপক কান্তি নাথ নগরীর উত্তর চান্দগাঁও এলাকার নাথ পাড়ার বড় বাড়ীর মৃত নিকুঞ্জ বিহারী নাথের ছেলে এবং ইসরাত আশরাফি অপি চর পাথরঘাটার খাঁন বাড়ীর আশরাফ আলীর ছেলে। মামলার বাদী মো. বাবুল নগরের চান্দগাঁও থানাধীন হামিদের চর শাহাজি মাজার এলাকার মাহফুজুল হকের ছেলে। বাবুল পেশায় পানের দোকানদার।

 

জানা যায়, মামলার অনত্যম আসামি রুপক কান্তি নাথের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা ও নানান অপরাধের অভিযোগ। গত বছর ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। ওইদিন জামিন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধদের হাতে খুন হন সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবী। এ সময় সাহিদুল ইসলাম মাসুম নামে এক সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাকে রুপক কান্তি নাথ তার হাতের থাকা লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনায় গত ৬ জানুয়ারি কমল রুপক কান্তি নাথসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় রুপক কান্তি নাথ ৩ নম্বর আসামি।

 

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের একান্ত সহযোগী হিসেবে ছিলেন রুপক কান্তি নাথ। ওই সময় প্রভাব কাটিয়ে সরকারি ভূমি দখল ও বিক্রি এবং ভুয়া দলিল সৃজনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, চেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

তিনি বলেন, আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তাদেরকে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

মামলার এজাহারে বাবুল উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট মোড়ের পুলিশ বক্সের সামনে ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে অবস্থান করে। ওই সময় ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী শন্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। ওই দিন বহদ্দারহাট মোড়ের ছাত্র জনতার মিটিং চলাকালীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ ব্যাপক ধ্বংসজজ্ঞ ও মেস্যাকার করে। ওই দিন সকাল ১১টার দিকে আসামিরা মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণ করে লাঠিসোঁঠা, হকিস্টিক ও কিরিচ এবং মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সমাবেশে আক্রমণ করে। ওই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির এক পর্যায়ে আসামিদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে বাবুলের ডান হাতের পিছনে ও পিঠে ৬টি ছিটা গুলি লাগলে লুঠিয়ে পড়ে এবং তার ডান হাতে কিরিচের কোপ মারে। ওই এলাকায় আসামিরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের গুলিতে ও বোমা বিস্ফোরণে প্রচুর লোক হতাহত হয়। বাবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকাবস্থায় তার সাথে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা না করিয়ে তাকে গোপনে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করায়। পরবর্তীতে তার অবস্থা অবনতি হলে এবং দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট