চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাড়ি চট্টগ্রামে হলেই বদলি!

সিএমপিতে তিনদিনে ১৩ জনের বদলি বিষয়টি অনেকটা বৈষম্যমূলক, আপাতত এ ধরনের বদলির আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে : উপ-কমিশনার (সদর)

নাজিম মুহাম্মদ

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বাড়ি কিন্তু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে চাকরি করছে এমন পুলিশ সদস্যদের চট্টগ্রামের বাইরে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

ইতিমধ্যে তিনদিনে সাতজন পুলিশ পরিদর্শক এবং ছয়জন ট্রাফিক পরিদর্শককে বদলির আদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে তারা বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ না দিলে ২১ অক্টোবর তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) হিসেবে ধরে নেয়া হবে। এর বাইরে নগর পুলিশের প্রত্যেক বিভাগে বাপ দাদার বাড়ি চট্টগ্রামে এমন সদস্যদের খুঁজে বের করতে চিঠি দেয়া হয়েছে সিএমপি সদর দপ্তর থেকে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে এ সংক্রান্ত তিনটি আদেশ জারি করা হয়েছে। ৭ অক্টোবর জারি করা আদেশে সিএমপির ছয়জন ট্রাফিক পরিদর্শককে মহানগর থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়। ১০ অক্টোবর থানা পুলিশের ৭ জন পরিদর্শককে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী ও চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আবুল কালামও রয়েছেন। এই দুইজন সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্ব পাওয়ার দুইমাসেরও কম সময়ে বদলি হলেন। সুকান্তের বাড়ি রাউজান এবং আবুল কালামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলায়। বদলি হওয়া অন্য পাঁচ পুলিশ পরিদর্শক হলেন, আতিক আহমেদ, ফজলুর করিম সেলিম, সাইফুল আলম চৌধুরী, মর্জিনা আকতার মর্জু ও আসাদ করিম চৌধুরী।
ট্রাফিক বিভাগ থেকে যাদের বদলি করা হয়েছে তারা হলেন, শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক যথাক্রমে দেবব্রত কর, সিরাজ উদ- দৌলা, মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুছ, মোহাম্মদ সরওয়ারুজ্জামান, কানু চন্দ্র বিশ্বাস ও সুভাষ চন্দ্র দে।

একইদিনে অর্থাৎ ১০ অক্টোবর একটি চিঠি সিএমপির হেডকোয়াটার থেকে সব বিভাগে পাঠানো হয়। উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে,ঢাকার মৌখিক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, আপনাদের স্ব স্ব বিভাগে কর্মরত এসআই থেকে তদনি¤œ পদমর্যাদার যে সকল পুলিশ সদস্যগণের নিজ জেলা চট্টগ্রাম তাদের তথ্যাদি বিশেষ বাহক মারফত জরুরি ভিত্তিতে সিএমপির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে পাঠাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের মৌখিক নির্দেশনায় নগর পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে আমি একটি চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠিতে নিজ জেলা যাদের চট্টগ্রামে তাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার নিজস্ব কোন সিদ্ধান্ত নয়। ইচ্ছে করলেতো আমি এ ধরনের চিঠি দিতে পারিনা।

উপ-কমিশনার শ্যামল নাথ বলেন,শুধুমাত্র চট্টগ্রামের জন্য এ ধরনের আদেশ- বিষয়টি দেখতে অনেকটা বৈষম্যমূলক। ঢাকা জেলায় যাদের বাড়ি তাদের বেলায়ও একই নিয়ম হওয়া উচিত। একই ভাবে দেশের সব জেলার জন্য একই ধরনের নিয়ম হলেই কোন সমালোচনা উঠবেনা। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের সাথে কথা বলে ইতিমধ্যে আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আপতত এ ধরনের বদলির আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

নগর পুলিশের সদস্য সংখ্যা সাত হাজারের মতো। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্যের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাদের বেশিরভাগই এসআই থেকে নি¤েœ কনস্টেবল। আর কর্মকর্তা পর্যায়ে আছেন মাত্র ছয়জন।

হঠাৎ করে এ ধরনের আদেশে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে নি¤œস্তরে যারা চাকরি করেন, তারা এই বদলিকে অন্যায্য দাবি করে বলেছেন, ঢাকা মহানগরে চাকরি করা ৩০ হাজার পুলিশের বেশিরভাগেরই ঢাকায় বাড়ি আছে। তারা সেখানে চাকরি করতে পারলে চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যরা এখানে চাকরি করতে সমস্যা কোথায়? তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনস্টেবল, এএসআই ও এসআইয়ের মতো পদে চাকরি করার কারণে তাদের সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে কাটাতে হয়। দিন শেষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করাটাই তাদের জন্য স্বস্তির। তাছাড়া তাদের বেতন ভাতা কম হওয়ায় চাকরি এবং পরিবার আলাদা হলে অনেকের জন্য তা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সিএমপিতে চাকরি করা চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদস্যদের বিরুদ্ধে অসদাচারণের অভিযোগ কম দাবি করে একাধিক পুলিশ সদস্য দাবি করেন, দুই একজন যদি দোষ করে থাকেন তবে তাদের খুঁজে বের করে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি কিংবা বদলি করা হোক। এভাবে ঢালাওভাবে বদলি করলে মানুষ ভিন্ন বার্তা পেতে পারে।

এর আগে ২০০৩ সালের ২৩ জুলাই ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী অপহরণ ও খুনের পর চট্টগ্রাম জেলায় বাড়ি অথচ চট্টগ্রাম মহানগরে চাকরি করেন এমন সব পুলিশ সদস্যকে চট্টগ্রাম রেঞ্জেরই বাইরে বদলি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ নয়, র‌্যাব-৭ শেষ পর্যন্ত জামাল উদ্দিন অপহরণের রহস্য উদঘাটন করে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) দায়িত্ব নেওয়ার পর এক জেলা ও মহানগরে দীর্ঘদিন চাকরি করা পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরিবর্তে সিএমপিতে কর্মরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সদস্যদেরই বদলি করার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এক্ষেত্রে তাদের অপরাধ বা কাজের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে বিবেচনা না করে কেবল চট্টগ্রামে বাড়ি থাকাকেই বদলির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট