চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

ছুটির দিনে সবুজ প্রেমীদের ভিড়

বায়েজিদ সবুজ উদ্যান ষ নিরাপত্তা ও পরিচর্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দর্শনার্থীরা ষ পার্কের নিরাপত্তা ও পরিচর্যায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে একমাসের মধ্যে : প্রকল্প পরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বায়েজিদে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সামনে দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়েছিল গণপূর্তের কয়েক একর জায়গা। যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিল অস্থায়ী অনেকগুলো ঘর। অনেকটা বস্তি আকৃতির এ জায়গাটিতে সন্ধ্যা নামলেই বসত মাদকের আসর। রাত হলে সাধারণ মানুষ ভয় পেত এই রাস্তা ধরে হাঁটতে। অপরাধের এ অভয়ারণ্যটিকে রূপকথার গল্পের মত বদলে দিয়েছে গণপূর্ত। প্রায় ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছে সবুজাভ প্রকৃতির আঙ্গিনা। নামকরণ করা হয় বায়েজিদ সবুজ উদ্যান। ২ একর জায়গার উপর গড়ে ওঠা মনোরম এ সবুজ পার্কটিতে উদ্বোধনের প্রথম সপ্তাহের ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। তবে দর্শনার্থীদের মালামাল সুরক্ষা ও পার্কের পরিচর্যায় কাউকে দেখা যায়নি এ উদ্যানে। এতে পার্কের নিরাপত্তা ও পরিচর্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দর্শনার্থীরা।

বায়েজিদ নগরীর শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন সকালে রাস্তার দু’পাশ ধরে কারখানায় পাড়ি জমান এখানকার শ্রমিকরা। শতাধিক শিল্প কারখানায় কাজ করেন লক্ষাধিক শ্রমিক। ব্যস্ত শহরের বুকে তাদের জন্য বিশ্রাম বা বিনোদন নেওয়ার জায়গার বড় অভাব। তাইতো ছুটির দিনে কর্মব্যস্ত এসব মানুষগুলো একটু বিনোদনের খোঁজে ভিড় জমিয়েছে সবুজে ঘেরা পার্কটিতে। শরীরচর্চা ও শিশুদের খেলার জন্য পার্কের ভিতর রয়েছে আলাদা জোন। তাইতো শুক্রবার পার্কটিতে বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। পার্কটিতে শুধু বায়েজিদবাসী নয় নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকাল ৩টার পর বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে পার্কটিতে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। পার্কটিতে দেড়শতাধিক বাতির ব্যবস্থা থাকায় সন্ধ্যার পরেও থামেনি প্রবেশ। পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজনদের পাশাপাশি প্রিয় মানুষ ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পার্কে আনন্দঘন সময় কাটাতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। খেলাধুলার জোনে দোলনা ও উঁচু-নিচুতে চেপে আনন্দ নিতে দেখা গেছে শিশুদের। কেউবা বেঞ্চে বসে আড্ডা দিচ্ছেন আবার কেউবা হাঁটছেন ওয়াকওয়ে ধরে। আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন জলাধারের পাশে ঘিরে উঠা গ্যালারি কিংবা বিস্তৃত সবুজ মাঠে বসে। যেখানে কেউ ব্যস্ত ছিলেন স্মৃতিচারণে, কেউ শিশুদের সাথে খেলা নিয়ে আবার কেউবা ব্যস্ত সেলফি তুলতে। তবে ব্যস্ত শহরের মাঝে এক টুকরো বিনোদনের স্থান পেয়ে যেমন খুশি হয়েছে দর্শনার্থীরা তেমনি প্রশ্ন তুলেছেন পার্কের নিরাপত্তা ও পরিচর্যা নিয়ে।

পার্কে ঘুরতে আসা সাইফ আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পারি যে বায়েজিদে একটি সবুজ উদ্যান হয়েছে। আগ্রাবাদের জাম্বুরি পার্কটির মতই বায়েজিদ পার্কটি নির্মাণ করেছে গণপূর্ত। তাই আজ পার্কটি দেখতে বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসলাম। জায়গাটি ছোট হলেও চারদিকে সবুজে ঘেরা গাছ-পালা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা চকবাজার থেকে এখানে এসেছি। খেলাধুলার কোন মাঠ না থাকায় এটাই এখন আমাদের একমাত্র বিনোদন স্থান।’

দুই সন্তানকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসা মা রুমা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চাদের সারাদিন ঘর বন্দি করে রাখতে হয়। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর তাদের খেলাধুলা করার জন্য আর কোন স্থান নেই। তাইতো মোবাইল আর গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। আজ বাচ্চাদের স্কুল ও প্রাইভেট বন্ধ। তাই তাদের নিয়ে একটু বেড়াতে এসেছি। ভালো লেগেছে সবুজের মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটাতে। তারাও কিডস জোনে গিয়ে খুব আনন্দ করেছে। খুব ভালো কেটেছে আমাদের সময়।’
সাহেদ নামে আরো এক দর্শনার্থী জানান, ‘আমি সরকারি চাকুরি করি। চাকরির কারণে আমাকে শহরের বাইরে থাকতে হয়। তবে পরিবার শহরের মধ্যেই থাকে। ছুটি পেয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে এসেছি। নতুন পার্কটির বিষয়ে জানতে পেরে বাচ্চাকে নিয়ে এখানে ঘুরতে চলে এলাম। আমাদের আশেপাশে এটাই একমাত্র ঘোরার জায়গা। খুব সুন্দর সবুজে ঘেরা পরিবেশ। তবে একটি বিষয় নিয়ে আমরা খুব শংকিত। পার্কে কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই, নেই পরিচর্যার জন্য কোন মানুষ। এতে দর্শনার্থীরা ও পার্ক দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এদিকে আগামী একমাসের মধ্যে পার্কে নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচর্যার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী (সার্কেল-১) মো. শাহজাহান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি খালি পড়ে ছিল। ফলে কিছু অস্থায়ী বসতি গেড়েছিল এখানে। যেগুলোকে কেন্দ্র করে মাদকের আসর বসত বলে জানতে পেরেছি। মন্ত্রণালয় এই জায়গায় সবুজ উদ্যান করার উদ্যোগ নেওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করি। এই এলাকায় প্রচুর শ্রমিকের বসবাস। তাদের বিনোদন বা বিশ্রাম নেওয়ার মত কোন জায়গা নেই। সাধারণ মানুষের বিনোদনের কথা মাথায় এনেই এখানে সবুজ উদ্যানটি করা হয়। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও উদ্যানটির পরিচর্যার জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে পার্কে নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচর্যার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।’
পার্কটিতে যা যা রয়েছে

সুসজ্জিত প্রবেশ গেট দুইটি, বসার বেঞ্চ একক ৩৯টি ও দ্বৈত ৭টি মিলিয়ে ৪৬টি, ৩ হাজার বর্গফুটের জলাধার, জলাধারের পাশেই দুইটি উন্মুক্ত গ্যালারি, ৪ হাজার ফুটের সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে, নারী ও পুরুষের আলাদা টয়লেট, খেলার সরঞ্জামসহ শিশু বিনোদন এলাকা, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সিসি ক্যামেরা, ১০৮টি কম্পাউন্ড লাইট, ১৬টি গার্ডেন লাইট, ৫৫টি ফাউন্টেন লাইট রয়েছে। ২ একর জায়গার উপর ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা এই পার্কে সবুজ ঘাস রয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার বর্গফুট। এছাড়া পার্কটিতে রয়েছে ৪১ প্রজাতির বৃক্ষরাজির সংমিশ্রণে পরিকল্পিত বনায়ন। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে উদ্যানটি। কোন ধরনের ফি ছাড়া সবাই প্রবেশ করতে পারবে পার্কটিতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট