চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দোষ কার পিডিবি না বাড়ি মালিকের

হাসপাতাল বেডে কাতরাচ্ছে নিহা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

নূরী আরশি নিহা। চান্দগাঁও সিডিএ আবাসিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো স্কুল শেষে বাসায় ফিরে খেলাধুলায় ব্যস্ত আট বছর বয়সী এই শিশু। তবে নিজের অজান্তে বাসার বারান্দার পাশ ঘেঁষে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হয় ছোট্ট নিহা। পুড়ে যায় শরীরের একটি অংশ। পোড়া শরীরের যন্ত্রণা নিয়ে গত দশদিন ধরে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে এই শিশু। হাসপাতালে নিহা চিকিৎসাধীন থাকলেও তার মতো এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন খতিব বাড়িস্থ রোডের বাসিন্দাদের। এর জন্য নিহার পরিবার ও স্থানীয়রা বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়ী করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গত ১৫ বছর ধরে এসব লাইন স্থাপন রয়েছে। বরং নকশা বহির্ভূত করে বৈদ্যুতিক লাইনের পাশেই ভবন তৈরি করেছে মালিকরা এবং বারান্দাগুলো মূল ভবন থেকে বাড়তি করায় বৈদ্যুতিক লাইনগুলো বাসার পাশে লেগেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত ছয়মাস আগে দু’টি ভবনের জন্য নতুন করে ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয় বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

তবে বৈদ্যুতিক এসব লাইন এলাকার অধিকাংশ ভবনের পাশ ঘেঁষে গেছে। এসব লাইন স্থাপন না করতে বাধাও দেন এলাকাবাসী। এরমধ্যেই গত ২ অক্টোবর দুপুর একটার দিকে নীহারিকা ভবনের তৃতীয় তলায় বারান্দায় খেলতে গিয়ে বৈদ্যুতিক এ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় নিহা।

নিহার বাবা মাসুদ পারভেজ চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্টিলের একটি পাত দিয়ে খেলার সময় বৈদ্যুতিক লাইনের স্পর্শ লেগে যায়। এই সময় আগুনে পুড়ে যায় নিহার একটি অংশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে সে এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে’।

বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগুনে নিহার শরীরের প্রায় ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশা করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সে বাড়ি ফিরতে পারবে’।

স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম নাগরিক অধিকার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সিএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা মু. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিদ্যুতের এসব লাইন অন্যকোন স্থান দিয়ে অথবা বাসা-বাড়ি থেকে দূর করে স্থাপন করতে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনেননি। বরং দু’টি ভবনের জন্য বহু ভবনের পাশ ঘেঁষে এসব লাইন স্থাপন করেছে। যাতে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এসব লাইন যদি দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে নিহার মতো আরও অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হবে’।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কালুরঘাট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম পূর্বকোণকে বলেন, ‘কথাগুলো সঠিক নয়। এসব বৈদ্যুতিক লাইনগুলো আজ থেকে ১৫ বছর আগের। বরং এসব বৈদ্যুতিক লাইন থাকা সত্ত্বেও এসব ভবন মালিকরা ইচ্ছেমতো বাড়ি তৈরি করেছেন। এছাড়া বারান্দাগুলো করেছে তাও মূল ভবন থেকে অনেকাংশে বাড়তি করে। যার জন্যই এখন লাইনগুলো তাদের বাসার পাশে ঘেঁষেছে। এমন কি যে বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে বাড়িতেও এমন করা হয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট