চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কাল

ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

সুকান্ত বিকাশ ধর হ সাতকানিয়া

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কাল (সোমবার) অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে এ দিন শুধুমাত্র সাতকানিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী গতকাল (শনিবার) মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণার দিক দিয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ মোতালেব সিআইপি এগিয়ে থাকলেও ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নীরবে চালিয়ে গেছেন প্রচার-প্রচারণা। অন্যদিকে, মনোনয়ন বাতিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জামায়াত সমর্থিত আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরীও পিছিয়ে নেই প্রচারে। তিনি ঘরে ঘরে চালিয়েছেন তাঁর প্রচারণা। স্বাধীনতার পর থেকে যেহেতু সাতকানিয়া এলাকাটি জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত, তাই এ নির্বাচনে ভোটের হিসেবে ব্যক্তিগত ইমেজে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও

পিছিয়ে নেই জামায়াত ও বিএনপি সমর্থিত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। ফলে নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বোদ্ধামহল মনে করছেন। অন্যদিকে, প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থিরা। তবে, প্রচারণার পর থেকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজাহান ও সালাউদ্দীন হাসান চৌধুরীর পক্ষের লোকদের মধ্যে বিভিন্ন সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্বাচনের দিনও এ দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতার আশংকা করছেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কাল (সোমবার) শুধুমাত্র সাতকানিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। তবে, দেশ স্বাধীনের পর এবারই প্রথম ব্যালট পেপারের পরিবর্তে সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ জন্য ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। এছাড়া গতকাল (শনিবার) সকালে স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণের নিয়ম হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে অনুশীলনমূলক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেন। এতে ভোটাররা ইভিএম’এ ভোট প্রদানের বিষয়ে সকল ধারণা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।

এবার সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত (উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি) এম.এ মোতালেব সিআইপি (নৌকা), বিএনপি মনোনীত (দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক) আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামায়াত সমর্থনকারী) আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরী ( মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মুন্না চৌধুরীর ঋণ খেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হলেও হাইকোর্টের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

অন্যদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা বেগম (কলসি), তারান্নুম আয়শা (প্রজাপতি) ও জান্নাতুল নাঈম রিকু (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রিকুর মনোনয়ন প্রথমে বাতিল হলেও পরে তিনি প্রার্থিতা ফেরত পান।

অপরদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিএনপি মনোনীত মহানগর বিএনপির সদস্য বশির উদ্দীন আহমদ (ধানের শীষ), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান (তালা), উপজেলা বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সালাহউদ্দীন হাসান চৌধুরী (বই), সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন (চশমা), আছিফুর রহমান সিকদার (মাইক) ও ওমর ফারুক লিটন (নলকূপ)। এদের মধ্যে প্রথমে লিটনের মনোনয়ন বাতিল হলেও আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফেরত পান তিনি।

সাতকানিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল, ভোটার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এম. এ মোতালেব একজন সজ্জন ও পরোপকারী মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ব্যক্তি। তাঁর নিজস্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানে শুধু আওয়ামীলীগ নয়, সব দল ও মতের লোকজনও কর্মরত। এদের মধ্যে অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। এছাড়া, জামায়াতের একটি বড় অংশ মোতালেবের পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা ও বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তবে এ প্রচারণা থেকে বাদ পরেননি এলডিপির নেতা-কর্মীও। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা। প্রচারণায় বসে ছিলেন না বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও। ফলে সবদিক বিবেচনা করে, এ নির্বাচনে মোতালেবের বিজয় নিশ্চিত বলেও বোদ্ধামহল মনে করছেন।

অন্যদিকে, দেশ স্বাধীনের আগে ও পর থেকে সাতকানিয়া উপজেলাটি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত ৩ জনই বিজয়ী হয়েছিলেন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে সাতকানিয়ায় কোন দলীয় প্রার্থী দেয়নি জামায়াত। তবে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ঋণ খেলাপির অভিযোগে প্রথমে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামায়াত সমর্থিত) আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরীর। পরে ঋণের প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় অংশ নেন তিনি।

উল্লেখ্য, এ নির্বাচনের আগে জামায়াত সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীনের মার্কাও ছিল মোটরসাইকেল। অন্যদিকে, জামায়াতের সাবেক আলোচিত সাংসদ ও নেতা আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুন্না চৌধুরী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের উভয়ের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদর পাড়ায়। বাড়িও পাশাপাশি স্থানে। বিগত ১০ বছরের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি বলে এমন অভিযোগ জামায়াতের আগে থেকে রয়েছে। জামায়াত নেতা-কর্মীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে স্বতন্ত্র (জামায়াত সমর্থিত) চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

অপরদিকে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কৌশলগত কারণে প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও সাতকানিয়ায় বিএনপির ধানের শীষের ভক্ত রয়েছে প্রচুর। তাই গাফ্ফার চৌধুরী ও বিএনপি সমর্থিতরা মনে করেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে গাফ্ফার চৌধুরী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট