চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রশাসনের নীরবতা

মহাসড়কে অবৈধ পার্কিংয়ে দুর্ভোগ

সীতাকু- সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু-

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে প্রায়ই তীব্র যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে এই রুটে চলাচলকারী নিত্যযাত্রী ও গাড়ি চালকরা চরম ক্ষুব্ধ হলেও এ নিয়ে তেমন কোন কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এ কারণে অবৈধ পার্কিং দিন দিন বাড়ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ের বড়দারোগারহাট থেকে চট্টগ্রামে যাবার পথে অন্তত ৮-১০টি পয়েন্টে প্রায়ই যানবাহন দাড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুমিরা বাইপাস, কুমিরা বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় গেট এলাকায়, টোবাকো গেট, সলিমপুর ফকিরহাট, পাক্কা রাস্তার মাথা প্রভৃতি স্থান। এতে এসব স্থানে প্রায়ই যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসবের কোন প্রতিকার হয় না। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সীতাকু- সদর থেকে সিটি গেট এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মহাসড়কের বেশ কিছু স্থানে মহাসড়কের ওপর সারি সারি যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। কুমিরা দক্ষিণ বাইপাসের পর থেকে কুমিরা আবাসিক স্কুল এন্ড কলেজের সামনে পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র বড় বড় লরি দাঁড়িয়ে আছে। একই অবস্থা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় গেটে এবং সলিমপুর পাক্কা রাস্তার মাথা এলাকায়। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বিকাল ও সন্ধ্যা থেকে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কে এত বেশি অবৈধ পার্কিং ও যানজট থাকে যে, দূরপাল্লার সব গাড়িকে গতি কমিয়ে চলতে হয়। সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালকরা জানান, এ রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। বিকালের দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা অভিমুখে হাজার হাজার গাড়ি রওনা দিলে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার সীতাকু-ে হাজার হাজার যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ঘটনায় অনেক হতাহত হয়েছে।
পরিদর্শনকালে মাদামবিবিরহাটের বাসিন্দা মো. ইকরাম আলী বলেন, পুলিশ সবকিছুতে শুধু ধান্ধা বোঝে। অনেক সময় আমরা রাস্তার পাশে ক্রেন দাঁড় করিয়ে রাখি। এর জন্য পুলিশকে মাসে ৫শ এবং মাঝেমধ্যে আরো ১শ বা ২শ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এভাবে ট্রাক-লরির মালিকদের কাছ থেকেও হাজার হাজার টাকা নেয়। চালকরা জানে যে, মালিকের সাথে পুলিশের সম্পর্ক আছে। তাই তারা গাড়ি পার্কিং বা যত্রতত্র রাখা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন না কিংবা পুলিশকে ভয়ও পান না। পুলিশের এই ভূমিকার কারণেই মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং ঠেকানো যাচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষের অভিমত।

সীতাকু-ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত প্রকৌশলী তানভীর আহমদ ছিদ্দিকী বলেন, অবৈধ এই পার্কিংয়ের কারণে যে কতটা ভুগতে হয় তা আমাদের মতো যারা প্রতিদিন আসা যাওয়া করেন, কেবলমাত্র তারাই বুঝতে পারবেন। সীতাকু-ের বাসিন্দা চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের ব্যবসায়ী রকি দাশ বলেন, প্রতিদিন তাকে চট্টগ্রামে এই পথে আসা-যাওয়া করতে হয়। গত বৃহস্পতিবারও কুমিরা আবাসিক বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের সামনে দিয়ে যাবার পর সেখানে একটি কারখানার সামনে অবৈধ পার্কিং করার সময় এক গাড়ি চালককে তিনি এর কারণ জানতে চাইলে ঐ চালক সোজা জানিয়ে দেন কারখানার সামনে তারা গাড়ি রাখবেনই! এভাবেই তারা যেন জিম্মি অবৈধ পার্কিংকারীদের কাছে।

সীতাকু- থেকে চট্টগ্রামগামী লোকাল বাস সেইফ লাইনের চালক মো. জনি বলেন, আমরা এই রুটে নিয়মিত গাড়ি চালাই। চালাতে গিয়ে নিজেরা চরম অসুবিধার সম্মুখীন হই। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে এবং আরো কিছু পয়েন্টে মহাসড়কের উপরেই সবসময় লং ভেহিকেল, লরি, ট্রাক ইত্যাদি দাঁড়িয়ে থাকে। এসব গাড়িকে ওভারটেকিং করে চলতে হয় আমাদের। তা করতে গিয়ে মহাসড়কের মাঝামাঝি গাড়ি চালাই। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। আমাদের কিছু করার থাকে না। মহাসড়ককে নিরাপদ করতে এসব অবৈধ পার্কিং বন্ধ করার জোর দাবি জানান তিনি।

মহাসড়কে অবৈধ গাড়ি পার্কিং বিষয়ে জানতে চাইলে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজেরাও এসব অবৈধ পার্কিং নিয়ে উদ্বিগ্ন। গত সপ্তাহে অবৈধ পার্কিং সংক্রান্ত যানজট থেকে মুক্তি পেতে আমরা সংশ্লিষ্ট যানবাহন মালিক ও শিল্প কারখানা কর্তৃপক্ষগুলোকে নিয়ে মিটিং করেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, কারখানার সামনের মহাসড়ক বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোন যানবাহন রাখবে না। কিন্তু অদ্যাবধি তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখছি না। যদি তারা নিজ দায়িত্বে এসব পার্কিং বন্ধ না করে, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট