চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খামার ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তনে ৫জি প্রযুক্তি

পূর্বকোণ ডেস্ক

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বর্তমান সময়ের চেয়ে শতগুণ দ্রুততর করতে এসে গেলো ৫জি প্রযুুক্তি। অন্যান্য নেটওয়ার্কের চেয়ে বহুগুণ বেশি ডাটাও ধারণ করতে পারে এ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেন্সর ও ড্রোনের সাহায্যে খামারিরা সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে শুরু করেছে। নেদারল্যান্ডে আলু চাষের উন্নয়নে ড্রোনের ব্যবহার চলছে। আর জাপানে ৫জি সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে ঝিনুকের খামারে পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা মনিটর করা হচ্ছে। ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হলে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তার উদাহরণ তৈরি করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকো। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের একটি ডেইরি

ফার্মকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করে ফেলা হয়েছে। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খামার ব্যবস্থাপনায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। ইংল্যান্ডের সামারসেটে অবস্থিত একটি পশুর খামারের কথা বলছি, যেখানে পশুর দেখভাল থেকে শুরু করে দুগ্ধ সংগ্রহ পর্যন্ত সবকিছু সম্পন্ন হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর খামারটিতে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে।

খামারের পরিচালক বলেন, ৫জি ইন্টারনেট আমাদের এমন সুবিধা এনে দিয়েছে যে আমরা এখন সবকিছুকেই কানেক্টেড করতে পারছি, যা আগে চিন্তাও করিনি। ৫জি দিয়ে যে অনেক কিছু করা সম্ভব তা আমরা দেখিয়েছি। খামারের প্রতিটি গবাদি পশুকেই আমরা কানেক্টেক করছি। প্রতিটি পশুর গলায় পরানো হয়েছে বিশেষ সেন্সরযুক্ত কলার পোর্ট যার সাহায্যে ওই পশুর সকল কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রেরণ করছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। শুধু তাই নয়, কোন গাভিটি কখন দুধ দেবে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে এবং দুধ সংগ্রহের নির্দিষ্ট স্থানে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাও সম্পন্ন করবে। গাভীগুলোর গলায় জড়ানো ব্যবস্থাটিতে ট্রান্সপন্ডার যুক্ত হয়েছে যার সাহায্যে তারা নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে রোবটবাহুর কাছে যেতে পারে। এর মাধ্যমে রোবটবাহু নির্দিষ্ট গাভীকে চিনে নেয় এবং দুধ সংগ্রহ করে।

মানুষের সাহায্য ছাড়া পশু পালনের খামারটিতে এমন সিস্টেম গড়ে তুলছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকো। আর এটি পরিচালনা করছে ৫জি ইপিআই সেন্টার। শুধু কলারই নয়, খামারে থাকা প্রতিটি গরুর গতিবিধি আর স্বাস্থ্য মনিটরিং করতে কানে বসানো হয়েছে স্মার্ট ডিভাইস। প্রজেক্ট ম্যানেজার জানান, কোন গরু চলাফেরা অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিলে আমরা বুঝে নেই সে হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তখন অফিসের কম্পিউটার মনিটরে তার অবস্থান দেখি এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সিসকো বলছে, খামার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে ৫জি প্রযুক্তি। এটি শুধুমাত্র ছোট আবদ্ধ খামার নয়, উন্মুক্ত খামারে থাকা যেকোন পশুকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

খামারের পরিচালক জানান, বিস্তৃত কানেক্টিভিটি গড়ে তোলার কারণে আমরা সব গবাদি পশুর অবস্থান ও তথ্য জানতে পারি। এটি শুধু খামারের ভিতরেই সীমাবদ্ধ নয়, উচ্চ ব্যান্ডউইথের ফলে আমরা অনেক বেশি স্মার্ট সেন্সর ব্যবহার করতে পারি যা আমাদের অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম। আর দ্রুতগতির কারণে খামারের বাইরে অন্য কোথাও বসে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব। খামার ব্যবস্থাপনায় এভাবেই আমূল পরিবর্তন আনতে পারে ৫জি। শুধু এই খামারই না, যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশে^ আমরা এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে চাই। যুক্তরাজ্যের ইনোভেশন এজেন্সির সহায়তায় তৈরি খামারটিতে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্য সরবরাহ এবং পরিচর্যার কাজও করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনে করছে, বিশে^র দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার জন্যে খাদ্য যোগাতে ২০০৯ সালের চেয়ে ৭০ শতাংশ উৎপাদন বাড়াতে হবে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে। সে লক্ষ্য পূরণে কৃষকদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায় থেকে এ বিষয়ে অবিলম্বে উদ্যোগ নেয়া অত্যাবশ্যক। –মিহ্রাজ রায়হান, সূত্র-সিএনএন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট