চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

তিন মাসের জেল

অবশেষে বিআরটিএ’র জালে সেই আলাউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ মে, ২০১৯ | ৯:২৪ অপরাহ্ণ

নম্বর প্লেটে ‘গ্রাম’ লেখা থাকলেও মেট্রো এলাকা চষে বেড়ায় গ্রামে চলাচলের জন্যই নির্ধারিত কিছু সিএনজিচালিত অটোট্যাক্সি। শুধু তাই নয়, মাত্র ১৫০০ টাকার দুটি টোকেন নিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় অবৈধ স্ট্যান্ডও বসিয়েছে এসব সিএনজিচালিত ট্যাক্সি। আর টাকার বিনিময়ে এ ট্যাক্সিগুলোর চালকদের কাছে নিজের স্বাক্ষর করা টোকেন দিতো আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিনের স্বাক্ষর করা এসব টোকেন এতটাই ক্ষমতার অধিকারী যে, টোকেনগুলো দেখলে রাস্তায় দায়িত্বরত পুলিশরাও কোনপ্রকার বাধা প্রদান না করে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ করে দেয়। এতে নগরীর মুরাদপুরের মতো ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক বক্সের ঠিক পাশেই অবৈধ ‘গ্রাম ট্যাক্সি’র স্ট্যান্ড বসিয়েছে আলাউদ্দিন। তবে চোখের সামনে অবৈধ স্ট্যান্ড দেখেও না দেখার ভান করে থাকত সেখানে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত সদস্যরা। কেননা, আলাউদ্দিনের স্বাক্ষর করা টোকেনের রঙ যেন তাদের চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।
আলাউদ্দিনের এ টোকেন বাণিজ্য নিয়ে গত পহেলা এপ্রিল ‘আইন ভাঙার মাসিক বিল ১৫শ টাকা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পূর্বকোণ। যা নজরে আসার পর থেকে এ মোড়ে একাধিকবার অভিযান চালায় প্রশাসন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এ মোড়ে অভিযান চালিয়ে ৯টি ‘গ্রাম ট্যাক্সি’ আটক করে জরিমানা করে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে সে যাত্রায় আলাউদ্দিনকে ধরতে না পারলেও এবার কৌশলে তাকে আটক করা হয় বলে পূর্বকোণকে জানান বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মঞ্জুরুল হক।
তিনি বলেন, ‘দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত একটি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, নগরীর মুরাদপুরে টোকেন দিয়ে ‘গ্রাম ট্যাক্সি’র অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়েছে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এ তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের অনুসন্ধানেও উঠে আসে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির নাম। যে প্রতিটি গ্রাম ট্যাক্সির কাছ থেকে প্রতিমাসে টোকেন দিয়ে ১৫০০ টাকা করে আদায় করে। আর তাই গত বৃহস্পতিবার মুরাদপুরের সেই অবৈধ স্ট্যান্ডটিতে অভিযান চালিয়ে ৯টি ‘গ্রাম ট্যাক্সি’ আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় এসব ট্যাক্সি থেকে আলাউদ্দিনের স্বাক্ষর করা লাল ও আকাশি রঙের বেশ কিছু টোকেন জব্দ করা হয়। তবে আলাউদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। আজ বুধবার (৮ মে) একই স্থানে আবার অভিযান চালাই আমি। এ সময় ১৯টি গ্রাম ট্যাক্সি আটক করে বিআরটিএ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তবে আজও তাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার আটক হওয়া গাড়িগুলোর চালকদের দিয়েই কৌশলে আলাউদ্দিনকে ডেকে নিয়ে আসা হয় বিআরটিএ’র কার্যালয়ে। যেখানে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করে আলাউদ্দিন। পরে তাকে তিন মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক আলাউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘সিএনজিচালিত ট্যাক্সিগুলো থেকে টোকেনের মাধ্যমে যে টাকা নেয়া হয়, তা আমাদের সমিতির জন্য নেই। এ টোকেন দেখলে কেন পুলিশ ছেড়ে দেয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাফিকদের কিছু দিতে হয়। না দিলে কী তারা গাড়ি ছাড়ে নাকি।’
দ-প্রাপ্ত আলাউদ্দিন (৪৫) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার পাক মুন্সির হাট এলাকার দক্ষিণ খানপুর গ্রামের মৃত মজিবুল হকের ছেলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট