চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজার-ফেনী উপকূলে বাঁধ কাম সড়ক

৪৩০ কি.মি সুপার ডাইক

পাউবো’র মেগা প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রাথমিক প্রস্তাবনা ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় অর্থায়নে কয়েকটি দেশের আগ্রহ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হ

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলে ৪৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার ডাইক (প্রতিরক্ষা বাঁধ) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের একাধিক অর্থনৈতিক জোনসহ সুরক্ষা পাবে কয়েক লাখ মানুষ। যোগাযোগক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নসহ পাল্টে যাবে সমুদ্র উপকূল এলাকা। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, এটি ফেনীর পশুরাম নদী থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে যাবে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, বড় জলোচ্ছ্বাস ও যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে কয়েক লাখ মানুষ।

তিনি বলেন, ফেনীর পশুরাম নদী থেকে শুরু হয়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনের ডাইকের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। মিরসরাই ডাইকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল এলাকা এবং মহেশখালী থেকে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে সংযুক্ত করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সমুদ্র তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বেড়িবাঁধকে সুপার ডাইকের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এতে খরচও অনেকটা সাশ্রয় হবে।

প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধ ছাড়াও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে সুপার ডাইকে।

মহেশখালী মাদারবাড়িতে একাধিক বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অর্থনৈতিক হাব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সমুদ্র উপকূল ঘিরে এসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
মাতারবাড়ি এলাকার জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সেখানে অনেক বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। সমুদ্রতীর ঘিরে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তাই মাদারবাড়ির জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে।

প্রকল্পে সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, ধলঘাটা দ্বীপের চারপাশ সুরক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে বাজেট কমিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অর্থদাতা সংস্থার আশ্বাস পেলে প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করা হবে। প্রকল্পের জন্য একাধিক দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা পাবে কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়াও পরিবেশ-প্রতিবেশ শিল্প নগরী ও পর্যটনখাতে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এছাড়াও মিরসরাই শিল্পাঞ্চল, সীতাকু-, আনোয়ারা ইকোনোমিক জোন, চট্টগ্রাম বন্দর, কোরিয়ান ইপিজেড, বাঁশখালী কোল পাওয়ার প্লান্ট, কক্সবাজারের নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন, মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম এলাকাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে যোগাযোগেরক্ষেত্রে উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মিরসরাই, সীতাকু- ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ডাইক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রকল্পে প্রাথমিক কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পাউবো জানায়, সমদ্র থেকে ১০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুপাই ডাইকের প্রস্ত ধরা হয়েছে ৩২ ফুট। প্রকল্পে ৩০টি রেগুলেটর ও ৭টি সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন স্থানে সমুদ্রতীরের উন্নয়ন ছাড়াও পর্যটনের জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সাগর তীরবর্তী চরাঞ্চলকে ঘিরে বনায়ন, ইকো ট্যুরিজম এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের পর পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে।

প্ধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে শিল্প-বাণিজ্যসহ অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই অঞ্চলকে ঘিরে অর্থনৈতিক হাব ঘোষণা করেছে সরকার। সমুদ্র উপকূলীয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চল সুরক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট