চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

খুব শীঘ্রই স্থাপন করা হবে : ভিসি চবি ছাত্র হলে সিসিটিভি নেই

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

বুয়েটের মত চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র হলে কোন অঘটন ঘটলে অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হবে। কারণ ছাত্র হলের অভ্যন্তরে কোন সিসিটিভি নেই। দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে শিরোনামে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কখনো ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে অপরের মধ্যে মারামারি। আবার কখনো নিজেরা জড়িয়ে পড়ে অনন্তর্কোন্দলে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মারামারির এসব ঘটনা ঘটলেও বরাবরই দায়ীরা পার পেয়ে যায়। তার অন্যতম কারণ জড়িতদের শনাক্ত করতে না পারা। বেশিরভাগ সময়ে হল দখলকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, বিগত ১০ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে আট শিক্ষার্থী। তার মধ্যে ছাত্রলীগের দুইজন, ছাত্রশিবিরের তিনজন বাকি তিনজন সাধারণ শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তার জন্য ছাত্রীদের হলগুলোতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হলেও ছাত্রদের হলগুলোতে তা বসানো হয়নি। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলগুলোতেও সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১০টি হল রয়েছে। যার মধ্যে ছাত্রদের জন্য ৭টি ও ছাত্রীদের জন ৩টি আবাসিক হল রয়েছে। এসব হলে আবাসন সুবিধা পাচ্ছে ৪ হাজার ২৮০জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে মাস্টার দা সূর্য সেন হলে এক পাশে ছাত্র অন্যপাশে ছাত্রীরা আবাসন সুবিধা ভোগ করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মোট ১০টি হলের মধ্যে ছাত্রীদের তিনটি হলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) থাকলেও ছেলেদের ৭টি হলে তা নেই। যার কারণে ছাত্রদের হলগুলোতে একধরনের অনিরাপত্তাবোধ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব উদ্দীন বলেন, ‘এক বছর ধরে আলাওল হলে নিয়মিত থাকছি। বুয়েটে আবরার হত্যার পর আমরাও শংকিত। হল প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য। এফ রহমান হলের আরেক শিক্ষার্থী এন সাদাত বলেন, ‘হলের মধ্যে কোন চুরি কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি শনাক্ত করা কষ্ট হয়ে পড়ে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয় না। যদি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়, তাহলে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা যেত।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু পূর্বকোণকে বলেন, ‘বুয়েটের মত জায়গায় যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে সেক্ষেত্রে চবিতেও এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদিও চবিতে বিগত সময়গুলোতে এরকম নৃশংস ঘটনা ঘটেনি। যদি সিসিটিভির আওতায় আনা যায় তাহলে নিরাপত্তার বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত থাকা যেত। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি আমরা হল প্রশাসনের সাথে আলোচনা করব।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর পূর্বকোণকে বলেন, প্রথমত রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে হবে প্রশাসনকে। তারপর সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করে প্রতিটি শিক্ষাার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম বলেন, ‘ছাত্রীদের হলগুলোতে সিসি ক্যামেরা ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। ছাত্রদের হলগুলোতেও সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি উপাচার্যের সাথে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কত দিনের মধ্যে স্থাপন করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনের ভর্তি পরীক্ষার আগেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত) শিরিন আকতার পূর্বকোণকে বলেন, ‘ছাত্রদের হলগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে হল প্রশাসকদের সাথে মিটিং করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ছাত্রদের হলেগুলোতেও সিসিটিভি ক্যামেরা সংযুক্তি করতে পারব বলে আশা রাখছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট