চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চবির ক্যাম্পাসে থাকেন না ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট-প্রক্টররা!

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের প্রভোস্টের কাজ ২৪ ঘণ্টা হল পরিচালনা করা। আর আবাসিক শিক্ষকদের কাজ শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়ছেন কিনা তদারকি করা। কিন্তু তারা কেউ ক্যাম্পাসে রাতযাপন করেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রভোস্ট আর আবাসিক শিক্ষকদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বছরে একবার শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরমে সই করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন প্রক্টর, তিনিও ক্যাম্পাসে থাকেন না। ফলে ছাত্রসংগঠনের মধ্যে কোনো ঝামেলা হওয়ার অনেকক্ষণ পর প্রভোস্ট কিংবা প্রক্টররা জেনে থাকেন। এমনও সময় গেছে, ঘটনা হয়েছে রাতে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জেনেছে পরদিন সকালে। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে চবি ছাত্রলীগের সিএফসি ও বিজয়গ্রুুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন না প্রশাসনের কোনো লোকজন। এর আগে ওইদিন সন্ধ্যায় শাহ আমানত ও শাহজালাল হলের দুই গ্রুপ অবস্থান নিয়ে একে অপরকে ইট-পাটকেল ছুড়ে। তখনও কোনো প্রভোস্ট হলে ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে, পরদিনও কোনো প্রভোস্ট এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেননি।

সূত্র জানায়, তাপস সরকার নিহত হওয়া ছাড়া ২০১৪ সালের পর ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সব সংঘর্ষ ঘটেছে রাতে। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চবির ২ নম্বর গেট সংলগ্ন নিজবাসায় খুন হন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে আসেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ।

চবির আলাওল হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক আবদুল হক, এএফ রহমান হলের দায়িত্বে অধ্যাপক এমএম মনিরুল হাসান, শাহজালাল হলের দায়িত্বে শাহেদ বিন সাদিক, সোহরাওয়ার্দী হলের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ, শাহ আমানত হলের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. মু. গোলাম কবীর, শহীদ আবদুর রব হলের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. একেএম মাঈনুল হক মিয়াজী, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান, শামসুন নাহার হলের দায়িত্বে ড. লায়লা খালেদ (আঁখি), প্রীতিলতা হলের দায়িত্বে পারভীন সুলতানা ও বেগম খালেদা জিয়া হলের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাসেম।

ছাত্রী হলের প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে থাকলেও অভিযোগ রয়েছে ছাত্র হলের কোনো প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরীও বিশ্ববিদ্যালয়ে না থেকে নগরের কোতোয়ালী থানাধীন হেমসেন লেনে থাকেন। ফলে ছাত্রসংগঠনের মধ্যে যেকোনো ঘটনা ঘটলেই সেটি বড় হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রভোস্টদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পুলিশ ঢুকলে প্রক্টরের অনুমতি লাগে, আর হলে ঢোকার ক্ষেত্রে অনুমতি লাগে প্রভোস্টের। কিন্তু বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর আর প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে থাকেন না। রাতে ছাত্রদের বিপদের মধ্যে রেখে তারা চলে যান ক্যাম্পাসের বাইরে নিজ নিজ বাসায়।
অথচ তাদের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পরিচালনা করা। আবাসিক হলের কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রভোস্টদের উপস্থিত থাকার নিয়ম রয়েছে, ছাত্ররা ঠিকমতো পড়াশোনা করছেন কি-না তা আবাসিক শিক্ষকরা তদারকি করবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগেই এ নিয়ম হারিয়ে গেছে।

ছাত্রদের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রভোস্টরা মাসে একবার, কোনো সময় একবারও হলে আসেন না। শাহজালাল হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদতো বছরেও হলে আসতেন না। শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন নতুন প্রভোস্ট দিতে বাধ্য হন।
সোহরাওয়ার্দী হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রভোস্ট শুধু মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফরমে সই করতে আসেন। তা ছাড়া অন্য সময় তাকে দেখা যায় না। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা হলের ১৫১ নম্বর কক্ষে বহিরাগত কয়েকজনকে ধরে এনে মারধর করেছেন। ওই ঘটনার সময়ও প্রভোস্ট উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগের বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি না কেন? সেটি প্রশাসনকে (উপাচার্য) জিজ্ঞেস করেন।

১৫১ নম্বর কক্ষে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। – বাংলানিউজ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, যিনি ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তিনি সাবেক নেতা, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেউ নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী অনিয়ম করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো। যারা রাতে ক্যাম্পাসে থাকবে না তাদের প্রভোস্টের দায়িত্বে রাখব না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট