চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৯ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভায় অর্থমন্ত্রী

আতাউর রহমান খান কায়সার মাটি ও মানুষের বন্ধু ছিলেন

‘চট্টগ্রামের জন্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছি। কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য আমার মন খারাপ।’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২০ পূর্বাহ্ণ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আতাউর রহমান খান কায়সার ছিলেন ক্ষণজন্মা মানুষ। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও মাটি ও মানুষের বন্ধু ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে যেভাবে ভালবেসেছেন- তা অনেক বড় ব্যাপার। তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে দলকে দুঃসময়ে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি জ্ঞানী, নির্মোহ ও ত্যাগী নেতা ছিলেন। এ ধরনের মানুষ চিরদিন সাধারণ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। আজ ৯ বছর পরও তাঁর স্মরণসভায় এত মানুষের উপস্থিতি তা-ই প্রমাণ করে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে দেশের অগ্রযাত্রা দেখে খুশি হতেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল বুধবার এলজিইডি মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিস, আবুল কালাম চৌধুরী, এডভোকেট আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম, আবু সাঈদ, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্জাদা মহিউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জন্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছি। কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য আমার মন খারাপ। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ হিসেবে চট্টগ্রামের জন্য অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, মন্ত্রী উল্লেখ করেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুটা অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি। যা হওয়া উচিত ছিল না। তবে যা দেখছি তা চিরস্থায়ী নয়। চিরস্থায়ী হবে যা সুন্দর এবং কল্যাণকর। যে রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শিখিয়ে গেছেন, যে রাজনীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেন তার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসছে।

যুব সমাজের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন- যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে তাদের বিশেষ দায়িত্ব আছে। তাদেরকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে কোথাও বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। তিনি নিজে ছাত্রলীগ করতেন উল্লেখ করে বলেন, টিউশনি করে লেখাপড়া করেছেন। লজিং থেকেছেন। সেই জায়গা থেকে আজ দেশের অর্থমন্ত্রী। যুব সমাজকে প্রশ্ন করে বলেন, তোমাদের এত তাড়া কিসের? এই প্রতিযোগিতা কিসের প্রতিযোগতিা। দেশকে ধ্বংস করার প্রতিযোগিতা। দেশকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য। তবে তাতে তোমরা জয়ী হবে না। জয়ী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফল হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আগামী ৫ বছরে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন হবে। কায়সার ভাই চিন্তা করতেন বাংলাদেশকে কিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে উন্নয়ন করা যায়। কারণ ১৯৬০ সালেও তারা বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। সারাবিশে^ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ আজ সবার উপরে। ২০৩৩ সালে পৃথিবীর অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ২৪ নম্বরে আসবে। তিনি দেশের মুক্তি সংগ্রামে আজীবন কাজ করেছিলেন।
ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেন, তিনি তাঁর পিতার দেখানো পথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চান। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। তাঁর মরহুম পিতার স্মরণসভার আয়োজন করার জন্য তিনি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানান।

এমএ সালাম বলেন, কায়সার ভাইকে কখনোই গ্রুপ করতে দেখিনি। বরং তিনি সব গ্রুপকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। পৌনে ১১ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আমি তা কল্পনাও করতে পারিনি। আকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো, সমুদ্রসীমা থেকে শুরু করে তার অর্জন সারারাত বললেও শেষ হবে না। কয়েকজনের কারণে অর্জন নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো বড়ি নেই যা খেলে রাজনীতিবিদ হওয়া যায়। অনেক কথা টিভি পর্দায় বলা যায় না। আমরা যদি প্রয়াত নেতাদের স্মরণসভায় স্মৃতিচারণ শুনি, বঙ্গবন্ধুর বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ি তাহলে আদর্শ শিখতে পারি। ‘কারাগারের রোজনামচা’ যদি পড়ি অনেক কিছু শিখতে পারি। তিনি বলেন, ইঞ্চি ইঞ্চি করে শেখ হাসিনা যে অর্জন করছেন, আমরা নেতা-কর্মীরা তা মাইলের পর মাইল ধ্বংস করছি। আমরা পাষাণ হয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকে আমাদের তৃণমূলের কর্মীরা চমৎকার বলেন, ‘নেতারা রাজনীতি করছে কামানোর জন্য, কর্মীরা খরচ করছে দল টিকিয়ে রাখার জন্য।’
নঈমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সব সমস্যার সমাধান যদি প্রধানমন্ত্রীকে করতে হয় তবে এত মন্ত্রীর দরকার কী! এখন সরকার ও দলের মধ্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আতাউর রহমান খান কায়সার ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জিন্সের প্যান্ট, কেডস পরে তিনি মিছিলে যেতেন। সে সময় যারা খাটের নিচে লুকিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছে আজ তারাই সাংসদ হয়ে সংসদে যাচ্ছে। বুয়েটের ঘটনা ষড়যন্ত্রকারীদের একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এবং চলমান শুদ্ধি অভিযান বন্ধের পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।

শামীমা হারুণ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে ত্যাগী নেতারা ছিলেন। তাদের ইতিহাস সংগ্রামের। আতাউর রহমান খান কায়সারকে রাজনৈতিকভাবে যতটা দেখেছি, তার চেয়ে পারিবারিকভাবেই বেশি দেখেছি।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাঞ্জলি : আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার চন্দনপুরাস্থ মরহুমের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, জেয়ারত ও মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ, ইউনুস গণি চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, উপদপ্তর সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য শেখ ফরিদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজম উদ্দিন, উত্তর জেলা কৃষকলীগ নেতা সেলিম সাজ্জাদসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাঞ্জলি : আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মরহুমের কবর জিয়ারত করেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, মাহবুবুর রহমান শিবলী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মমতাজ উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিন দাশ রাহুল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট