চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়ক সাজছে সোনালো-কৃষ্ণচূড়ায়

দেয়ালে দেয়ালে তারুণ্যের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ আগস্ট, ২০২৪ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় নগরীতে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে মুরাদপুর-বহদ্দারহাট সড়কে। রক্তমাখা এ সড়ককে এখন সোনালো-কৃষ্ণচ‚ড়াসহ নানা ফুলে সাজাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার ডিভাইডারজুড়ে সবুজায়ন করছেন তারা।

 

এই উদ্যোগের সমন্বয় করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী রিদুয়ান রিজভি। জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, দেশ সংস্কারের অংশ হিসেবে নিজেদের জমানো টাকায় সামাজিক এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। আমাদের নগরীকে আমরাই সাজাবো- এই ভাবনা থেকেই শুলকবহর এলাকায় সোনালো, কৃষ্ণচ‚ড়া, অর্জুন, নিমসহ নানা গাছ লাগিয়েছি আমরা।

 

রিদুয়ান রিজভি বলেন, আমি ঢাবিতে পড়লেও জন্মস্থান চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা টান কাজ করে। এ কারণে এখানকার কিছু শিক্ষার্থীকে সংগঠিত করে শহরের বিভিন্ন সড়কে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। শুলকবহরের পর আরও বেশ কিছু জায়গায় আমরা এই বর্ষায় গাছ লাগাবো। এতে শহরে সবুজায়ন যেমন বাড়বে, তেমনি শহরের উষ্ণতা কমাতেও সাহায্য করবে।

 

শুধু সড়ক সবুজায়ন নয়- দুই পাশের পরিত্যক্ত দেয়ালে রঙিন আলপনাও আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। এসব আলপনায় আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার নাম, নানা স্লোগানের পাশাপাশি কেমন বাংলাদেশ গড়তে চান- তার চিত্রও তুলে ধরছেন তারা। নগরজুড়ে শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রশংসা যেমন পাচ্ছে, তেমনি সহায়তাও মিলছে।

 

নগরীর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দেয়াল ছিল স্যাঁতসেঁতে আর পোস্টারে ঢাকা। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সৌন্দর্য হারায় এই দেয়াল। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে রঙিন আলপনা। ‘স্বাধীনতা এনেছি যখন, সংস্কার করি’, ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করব’, ‘আমাদের দেশ আমাদেরই গড়ে নিতে হবে, পিণ্ডির গোলামি ছেড়ে দিতে হবে’- সহ নানা স্লোগানও আছে সেখানে।

 

বাওয়া স্কুলের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিলেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের একজন সাইমা ইসলাম। তিনি বলেন, দেয়ালগুলো খুব বেশি নোংরা ছিল। দেখতে ভালো লাগছে না। নতুন বাংলাদেশে সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা আর খারাপ ধারণা মুছে দিতে চাই। আমরা চাই- এসব আলপনা যেন কেউ নষ্ট না করে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যেন এসব তদারকি করে।

 

শুধু জিইসি বা ওয়াসা এলাকা নয়- একই দৃশ্য দেখা গেছে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুরাদপুর, টাইগারপাস, নিউ মার্কেট, একে খান গেট, কোতোয়ালী মোড়, দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলন-সংঘাতের পর গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রমে অনেকটা নতুন রূপ পেয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, শহরকে সাজাতে শিক্ষার্থীরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন- তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে তাদের যতটুকু সহায়তা করা দরকার, ততটুকু সহায়তা করবো। তাদের লাগানো গাছ, দেয়ালের গ্রাফিতি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হবে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট