চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও অভয়মিত্র ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন

চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ

জনসমুদ্রে পরিণত হয় গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও অভয়মিত্র ঘাট। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে সববয়সী মানুষের ভিড়। শিশু থেকে বয়োঃবৃদ্ধ বাদ পড়েনি কেউই। সবাই ভিড় জমান মাকে শেষ বারেরমত বিদায় জানাতে। গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর অভয়মিত্র ঘাটে বিকেল চারটার পরে কর্ণফুলীর পাড়ে সব বয়সী মানুষের ভিড় জমে ওঠে। কোথাও তিল ঠাঁইয়ের জায়গাও ছিল না। ট্রাকে করে মিউজিকের সুরে দুর্গাকে নিয়ে আনন্দ করতে করতে আসেন ভক্তরা। মুখে, গায়ে রঙ্গ মাখা ভক্তরা কিছুক্ষণ পরপরই উচ্চকণ্ঠে স্লোগান তুলছে ‘বল দুর্গা মা কি জয়’। কেউ শেষবারের মতো প্রণাম করছেন মাকে। মায়ের বিদায়কালে ভক্তদের চোখ ছলছল করছিল জলে।
গতকাল বিকেলে অভয়মিত্র ঘাট, পতেঙ্গা সৈকতের চিত্র ছিল এমনই। বেলা দুইটার পর থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। ঠেলাগাড়ি, রিকশ্ভ্যাান, ট্রাক, পিকআপে করে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা নিয়ে আসতে থাকেন তারা। এদিকে সকাল আটটা থেকে নগরীর ম-পে ম-পে বাজে দেবীর বিদায়ী সুর। ষোড়শ উপাচারে দশমীর বিহীত পূজা, শাস্ত্রীয় আচার, দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন, দেশ-জাতি, ব্যক্তিগত ও পরিবারের সুখ, শান্তি, মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত ছিলেন পূজার্থীরা।
অভয়মিত্র ঘাটে প্রতিমাকে শেষ বিদায় দিতে আসেন বয়স্ক মনি বাল দাশ। তিনি বলেন, মা চলে যাচ্ছে, আমি কি করে ঘরে বসে থাকি। আসছে বছর বেঁচে থাকলেতো মাকে দেখবো। যদি মা আসার আগেই মারা যাই তাহলেতো আর দেখা হবে না তার সাথে। তাই মাকে নয়ন ভরে দেখতে এসেছি। যাও মা যাও, স্বামীর সংসার সামলাতে যাও। শুধু প্রার্থনা আবার এসো মা। তাড়াতাড়ি এসো মা। এভাবেই আবেগভরে মনের কথাগুলো বার বার বলছিলেন তিনি। দেখা যায় মায়ের কোলে অথবা বাবার কাঁধে চেপে অনেক ছোট শিশুও এসেছে ঘাটে। তমালিকা মজুমদারের সারা মুখে রঙ্গ মাখা। কপাল ভরা লাল সিঁদুর, আর সুন্দর সাজে এসেছে ঘাটে মায়ের বিদায় দেখতে। তিনি বলেন, পূজা শেষে সিঁদুর খেলা হয়েছে ম-পে। মায়ের কপাল ভরে সিঁদুর দিয়েছি, আর নিজেও পড়েছি। তাই মনে খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন মায়ের বিদায় দেখতে এসেছি পারিবারের সবাই মিলে। অনেক আনন্দ করেছি। কিন্তু এখন মায়ের বিদায় বেলায় মনটা কেমন যেন করছে। কিন্তু বিদায়তো দিতে হবেই। তারওতো সংসার আছে। তাই মা আজ কৈলাশে যাবে তার নিজের সংসার সামলাতে।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার বলেন, পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ঘাটে অস্থায়ী পুলিশ কট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। র‌্যাবের টহল, নিয়মিত পুলিশ, নারী পুলিশ সদস্য, টুরিস্ট পুলিশসহ সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিমসহ ডুবুরিরাও। এছাড়া এবার নগরীতে ২৭০টি ম-পে পূজা হয়েছে। এরমধ্যে পতেঙ্গা সৈকতে ১৩০টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। আবার ফিরিঙ্গি বাজার অভয়মিত্র ঘাটে, কাট্টলী সৈকতে, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে ও পাহাড়তলীর বিভিন্ন পুকুর ও দিঘিতে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য রাতে ঘাটগুলোতে আলোকায়ন করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট