চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পটিয়ায় ওসি আমিনের কুশপুত্তলিকা দাহ

সামশুল হককে নিয়ে তোলপাড়

‘পাঁচ বছরে জুয়া থেকে হুইপ সামশুল হকের আয় ১৮০ কোটি টাকা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদের হুইপ, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জুয়া ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে শামসুল হক চৌধুরীর বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিমান বন্দর থানার ওসি সাইফ আমিনের স্ট্যাটাস নিয়ে এই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত শনিবার চট্টগ্রামে জুয়ার আসরে ম্যাজিস্ট্রেট ও র‌্যাব-৭ এর অভিযানেও ক্ষুব্ধ হন হুইপ। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী ক্লাব, ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাবে অভিযানের পর হুইপ এটিকে অযৌক্তিক দাবি করে বলেন জুয়ার ক্যাসিনো কিংবা কোন সরঞ্জাম র‌্যাব দেখাতে পারেনি। ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন আবাহনীর মহাসচিব হিসেবে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে রয়েছেন। সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অভিযানের নামে আবাহনী ক্লাবে তল্লাশি করা হয়েছে।

এদিকে ‘পাঁচ বছরে জুয়া থেকে হুইপ সামশুল হকের আয় ১৮০ কোটি টাকা’ স্ট্যাটাসটিকে অপপ্রচার অভিহিত করে ওসি সাইফ আমিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে তার শাস্তির দাবি জানিয়েছে পটিয়া উপজেলা যুবলীগ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পটিয়া উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল শেষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কের পটিয়া খাসমহল রোড এলাকায় ওসি সাইফ আমিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

হুইপের প্রতিক্রিয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা সাইফ আমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেন। এক সময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা ফেসবুকে যা লিখেছেন তা হুবুহু তুলে ধরা হল:
ক্লাব -জুয়া-সাংসদ এবং ওসি
‘ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ। মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌঁছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।

এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজগুলোতে পাঠানো হয়। বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না। মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লাখ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস। ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলঙ্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন। চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত (তথাকথিত যুবলীগ নেতা)। টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রা করেন না। এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো। এবং র‌্যাব এর এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা সত্ত্বেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহা. সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌ.। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন। জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব’।

হুইপের বিরুদ্ধে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় পটিয়া উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও পরে ওসি’র কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। পটিয়া উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক মোহাম্মদ হাসানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক ইমরান উদ্দিন বশিরের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, পটিয়া উপজেলা আ.লীগ সভাপতি আ.ক.ম. শামসুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক চেয়ারম্যান, আলমগীর খালেদ, শহিদুল আলী মঞ্জু, আবু তৈয়ব, সাহেদ উদ্দিন সুমন, শহিদুল ইসলাম জুলু, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য যথাক্রমে মো. ফোরকান, আজগর আলী বাহাদুর, আবুল হাসনাত ফয়সাল, দিদারুল আলম, মাইনুল হক রাশেদ, শাহ আলম মেম্বার, এনাম মজুমদার, রবিউল আলম ছোটন, শাহানা আকতার টিয়া, জাবেদ সরোয়ার, এয়ার মোহাম্মদ বুল, মো. মহিউদ্দিন, মিঠুন চৌধুরী, শীতল তালুকদার, জহির উদ্দিন তালুকদার, মো. শাহজাহান, আমানুল্লাহ আমেরি, কাজী কাদের, কামাল উদ্দিন পারভেজ, রহিম উদ্দিন পিবলু, ওয়াসিম, ফয়সাল আহমেদ জনি প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ ওসি সাইফ আমিনকে প্রত্যাহারপূর্বক শাস্তির দাবি জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট