চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে ২শ বছরের পুকুর

২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ অধিদপ্তরের পদক্ষেপের অভাবে বিলীন হতে চলেছে দুই’শ বছরের পুরানো পুকুরটি। নগরীর ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডস্থ কাপুরিয়া পাড়ার নজির ভান্ডার লেইনের দামুয়া পুকুর পাড় সংলগ্ন পুকুরটিকে সবাই চেনেন বাছামিয়া কেরানি বাড়ি আসুরা পুকুর বা ময়লার পুকুর হিসেবে। পুকুরটিতে এতদিন ময়লা ফেলা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন কৌশল ও প্রভাব খাটিয়ে ভরাটের কাজ করছে মালিকপক্ষের একাংশ। তবে পুকুর রক্ষায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন করার পরও কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় হারাতে বসেছে বহু বছরের এই পুকুরটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নজির ভান্ডার লেইনের আসুরা পুকুরটি দুইদিক থেকেই বালু ও মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ গন্ডার এই পুকুরটির প্রায় অর্ধেকই বালু ও মাটি দিয়ে তোড়জোড় করে ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অর্ধেকরও বেশি ছোট হয়েছে পুকুরটি। পুকুরের পাশেই গড়ে ওঠেছে কিছু বস্তির মত ঘর।

জানা যায়, পুকুরটি রক্ষার জন্য মালিক পক্ষের একটি অংশসহ স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ জানায়। তবে কোন পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় হারাতে বসেছে পুকুরটি। স্থানীয়রা জানায়, পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে, যেমন ঐতিহ্য হারাবে তেমনি এলাকায় বসবাস করা বহু মানুষের গৃহস্থালি ও দৈনন্দিন ব্যবহারে দুর্ভোগে পড়তে হবে। এছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনাসহ পানির উৎস সংকট দেখা দিবে বলেও আশঙ্খা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে নগরীর গোসইলডাঙ্গা মৌজার এ পুকুরটি ভরাটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মালিক পক্ষের একাংশের মৃত এম আকমল খানের ছেলে আসাদ খান। তবে পুকুর ভরাট না করতে একপক্ষ বাধা দিলেও বহিরাগতদের নিয়ে ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আসাদ খানের মোবাইল ফোনে (০১৮১৭-২৫০৫০১) একাধিক কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, পুকুরটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকাভুক্ত বলেও জানা যায়। অতীতে এই এলাকায় অগ্নিকা-ের ঘটনাও ঘটেছে। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এই পুকুর থেকেই পানি সংগ্রহ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে ভবিষ্যতে অগ্নিকা-সহ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পানির সংকট দেখা দিবে বলেও জানায় স্থানীয়রা।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী যেকোন ধরণের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। এসব পুকুর বা জলাশয় টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের উপযুক্ত ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকার পরও কঠোর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন নগরী হারাতে বসেছে জলাশয় বা পুকুরগুলো। এ পুকুরের বিষয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল) এর নজরে দেয়া হলে তখন তিনি পূর্বকোণকে বলেছিলেন, ‘পুকুর ভরাটে কোন ধরনের অনুমোদনের প্রশ্নই আসে না। মালিকানা নির্বিশেষে জলাশয় ভরাট আইনত নিষিদ্ধ। শীঘ্রই কর্মকর্তা পাঠিয়ে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো’।

তারপরও কিভাবে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে এমনটি জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল) আজাদুর রহমান মল্লিক গতকাল দুপুরে পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে জরিমানা করা আর মামলা করা। মামলার পর চার্জশিট দিলে আদালত ব্যবস্থা নেবে। এর বাইরে আমাদের আর কিছু করার নেই। যা করার আদালত করবে’। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে দেখতে হবে, না দেখে কিছুই বলতে পারবো না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট