চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডোবায় দুর্ভোগে বাড়ছে ক্ষোভ

কক্সবাজার

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

‘আমাদের আগের কক্সবাজার ফিরিয়ে দিন। উন্নয়নের কক্সবাজার চাই না।’ পর্যটননগরী কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক ও উপসড়কগুলোর অত্যন্ত নাজুক অবস্থার প্রেক্ষিতে এমনই পোস্ট দিয়ে চলেছেন ফেসবুকে নিজের পেজে ভুক্তভোগী কক্সবাজারবাসী।

কক্সবাজার শহরে একটি সড়কও চলাচলের উপযোগী নেই। প্রতিদিনই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোন খবর নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করছে, যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে পর্যটন শহর। ভুক্তভোগী মানুষের দাবি, পৌরসভার ইতিহাসে জঘন্যতম দুর্ভোগে সময় পার করছে পৌরবাসী। প্রধান সড়কটি পৌরসভার সামনে থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খুরুশকুল সড়কের মাথাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুকুরের ন্যায় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে মনে হয় যেন বহমান কোন নদী। বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। আর আহতের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে।
আকিব নামে একজন ফেসবুক ইউজার প্রধান সড়কের কয়েকটি ছবি তুলে ধরে লিখেছেন, ‘ভাবছেন এটা কোন পুকুর কিংবা ডোবা ? না, এটা পর্যটননগরী কক্সবাজার জেলা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা। যে রাস্তায় প্রতিনিয়ত লাখ মানুষের যাতায়াত। হয়তো ভাবছেন এই রাস্তায় হঠাৎ করে পানি এসে পুকুর হয়ে গেছে কেমনে ? আসলে তা না। বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় রাস্তাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। রাস্তাটির নানা জায়গায় এতো বড় বড় গর্ত দেখলেই মনে হবে, কোন যুদ্ধবিমান থেকে এইমাত্র বোমা ফেলা হয়েছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও লিখেছেন, ‘উন্নয়নের মহাকালে পর্যটন নগরীতে অনেক কিছু হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু মানুষের প্রতিদিনকার প্রয়োজনের জায়গাটায় বিন্দুমাত্র উন্নয়নের কোন ছোঁয়াই লাগেনি।’
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে কক্সবাজারে সরকারের অর্জনগুলো সড়ক-উপসড়কের গর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত সচেতন মহলের। এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অযোগ্য ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা উচিত বলে মনে করেন তারা। তাদের দাবি, কক্সবাজার বিশ^ব্যাপী পরিচিত একটি পর্যটন শহর।

অরূপ শর্মা নামে আরেকজন ফেসবুক ইউজার রীতিমতো সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘কক্সবাজারে কি কোন সাংবাদিক নাই? প্রেম পিরিতির নিউজ করতে পারেন? রাস্তা নিয়ে নিউজ করতে সমস্যা কোথায়? নাকি এটা উন্নয়নের মহাসড়ক।’

সিটি কলেজের শিক্ষক মঈনুল হাসান পলাশ বিধ্বস্ত সড়কের বেশ কয়েকটি চিত্র তুলে ধরে নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘কক্সবাজারের উন্নয়ন নিয়ে জেলা প্রশাসন গত বছর মোটা একখানা বই বের করেছিলো। সেখানে কক্সবাজারের কয়েক ডজন বিখ্যাত ব্যক্তি উন্নয়নের ব্যাখ্যায় বড় বড় রচনা লিখেছিলেন। আমার আন্তরিক অনুরোধ, কক্সবাজারের উন্নয়ন নিয়ে পরবর্তী বইয়ের প্রচ্ছদ নিচের ছবিগুলো (ফেসবুকে আপলোড দেয়া বিধ্বস্ত সড়কের ছবি) দিয়ে ছাপানো হোক।’

নাগরিক আন্দোলনের নেতা এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অযোগ্য নেতৃত্বকে দায়ী করব। বলতে গেলে জনপ্রতিনিধিদের চাইতে রাজনৈতিক নেতাদের অধঃপতন হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। রাজনৈতিক নেতাদের দেউলিয়াপনায় মূলত জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে নিজেদের নিয়ে। জনগণের প্রতি আর কারও দায়বদ্ধতা নেই। তবে মানুষের মাঝে যে ক্ষোভ বিদ্রোহ সৃষ্টি হচ্ছে তা একদিন জনবিস্ফোরণ হলে কেউ রক্ষা পাবে না।’ শহরের বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা এম সায়েম ডালিম লিখেছেন, ‘আমাদের আগের কক্সবাজার ফিরিয়ে দিন। উন্নয়নের কক্সবাজার চাই না।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট