চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

৮ হাজার গাছে নির্বিচারে কোপ!

মহেশখালী ক্ষতিপূরণ না দিয়েই কাটা হচ্ছে ১০ কোটি টাকা দামের ঝাউগাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ দিকে সৃজিত ঝাউ গাছের মালিককে ক্ষতিপুরণ না দিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের ৮ হাজার ঝাউগাছ নিধনে নেমেছে এসপিসিএল কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা আরও জানান, অর্থনৈতিক জোন বেজা গ্রুপ থেকে টিকে গ্রুপ লিজ নে। লিজ নেয়ার পর থেকে তারা সমাজিক বনায়নের মালিককে কোন নোটিশ না দিয়ে গাছ কর্তন অব্যাহত রেখেছেন।

এতে সামাজিক বনায়নের ভিতরে গড়ে উঠা গরুর কামার, ছাগলের কামার ও একটু পুকুরসহ প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে জমির ইজারাদার সামাজিক বনায়নের মালিক আনছারুল করিম সিকদারের। তিনি ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ঝাউগাছ কর্তন ও অবকাঠামো অপসারণ না করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

জানা যায়, বিগত ১৯৯৭ সালে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দ্বীপবাসীকে রক্ষার কবচ হিসেবে ভূমিকা পালন করা সৃজিত ঝাউবাগানটি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সমাজিক বনায়নের মালিক পূর্ব সুতরিয়ার মৃত শের উল্লাহ সিকদারের পুত্র আনছারুল করিম উক্ত পরিত্যক্ত জমি উৎপাদনমুখী করার জন্য ইজারা নিয়ে বিপুল সংখ্যক ঝাউগাছ সৃজন করে। উক্ত ঝাউবাগানের কারণে উপজেলার ধলঘাটার দক্ষিণাংশ সাগরের ঢেউ থেকে অনেকটা রক্ষা পেয়েছে। স্থানীয় লোকজন এই বাগানকে মডেল হিসাবে গণ্য করে একে রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচনা করত। সম্প্রতি সরকার থেকে ইজারা নেয়া ওই জমিতে এসপিসিএল’র প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বাগানের মালিক আনছারুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আগামীতেও তা করে যাব। আমরা চাই ধলঘাটায় উন্নয়নে এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিকল্প নাই। আমরা জমি দিয়েছে সহযোগিতাও করে যাচ্ছি কিন্তু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নির্বিচারে আমার সৃজিত গাছ ব্যাপকভাবে কর্তন করে যাচ্ছে। আমি দীর্ঘদিন এই বাগানের পরিচর্চা করে সর্বস্ব বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো বিষয়টি আমলে না নিয়ে গাছ কর্তন ও অবকাঠামো অপসারণ করে আমার চরম ক্ষতি করে যাচ্ছে।

আনছারুল করিম জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনে জানান, উক্ত জমি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন পতিত, খিলা ও বালুচর শ্রেণির অব্যবহৃত জমি ছিল। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজার পওর তফসিলে বর্ণিত জমি উৎপাদনমুখী করার, রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশর রক্ষার্থে সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন দরখাস্তকারীকে বিগত ২০০৫ সালের ১০ মার্চ সম্পাদিত ইজারা চুক্তিপত্র মূলে ইজারা প্রদান করে। তফসিলে বর্ণিত ইজারা প্রাপ্ত ৬.০০ একর (কম-বেশি) জমি ইজারা প্রদান করা হয়। ফলে অধীন তফসিলে বর্ণিত জমি দখল প্রাপ্ত হওয়ার পর নির্বাহী প্রকৌশলী, বা.পা.উ.বো, পওর বিভাগ, কক্সবাজার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্দেশনা মোতাবেক তাহাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ও কায়িক শ্রমে প্রায় ০৮ হাজারের অধিক ঝাউগাছ, ইউকেলিপ্টাস, একাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষাদির বাগান সৃজন ও তা পরিচর্যা করেছি। তফসিলে বর্ণিত জমিতে বিভিন্ন রবিশস্য ও ধান্য চাষ, গবাদি পশু পালনে ভোগ দখলে ছিলাম। এছাড়াও তফসিলে বর্ণিত জমিতে খামার ঘর, গরুর গোয়াল ও ছাগলের ঘর এবং একটি টিউবওয়েল ও একটি পুকুর বিদ্যমান ছিল।

বর্তমান পর্যায়ে উল্লেখিত বৃক্ষাদির বেড় দুইফুট হতে চারফুট হবে। ইতিমধ্যে আমার লীজ প্রাপ্ত তফসিলে বর্ণিত জমি সৃজিত বাগানসহ এস.পি.সি.এল প্রকল্পের আওতায় পড়ায় আমার নিজস্ব অর্থায়নে সৃজিত বৃক্ষাদির ও অন্য অবকাঠামোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইনতঃ হকদার বটে। সামাজিক বনায়নের মালিক আনছারুল করিম ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর গাছ কর্তন ও অবকাঠামো অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ধলঘাটার চেয়ারম্যান কামরুল হাসান পূর্বকোণকে বলেন, উন্নয়নের জন্য ধলঘাটা অধিকগ্রহণ দরকার আছে, তবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা একটি মানবিক দায়িত্ব বলে মনে করি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট