চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও জনবান্ধব পুলিশ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিস পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস পুলিশ অর্জন করবে। মানুষ যেন মনে করে, হ্যাঁ, পুলিশ আমাকে সাহায্য করবে, আমার পাশে আছে, পুলিশ আমার একটা ভরসাস্থল। সেই জায়গাটা অর্জন করতে হবে, সেই বিশ্বাসটা গড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রকৃত অর্থে দেশের পুলিশবাহিনী নিরপেক্ষভাবে আইনের রক্ষকের ভূমিকা পালন করে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনই যদি হয় পুলিশের ব্রত, যদি সততা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আইনই যদি হয় পেশাগত ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক, তাহলে তারা সত্যিই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠবে। বাংলাদেশকে প্রকৃতই শহীদদের স্বপ্নের আদলে গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সারাবিশে^র কাছেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ভিশন ’২১ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। আর ভিশন ’৪১ অর্জিত হলে বাংলাদেশ উন্নত বিশে^র কাতারে সামিল হতে পারবে। এ জন্যে দরকার টেকসই উন্নয়ন। আর টেকসই উন্নয়নের জন্যে প্রয়োজন সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা অগ্রগণ্য। পুলিশ যদি সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনে’ যথাযথ দায়িত্ব পালন করে তাহলে সামাজিক শৃঙ্খলা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে। সেজন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুলিশকে হতে হবে জনগণের বন্ধু’। তিনি যথার্থই বলেছেন, পুলিশকে জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে, সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অনুধাবন ও অনুসরণ করা প্রতিটি পুলিশসদস্যের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য মনে করি আমরা।

‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে উজ্জীবিত একটি সেবাপরায়ণ বাহিনী হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও পুলিশের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।। এখনো দেশের জনমানুষের নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি রক্ষায় তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশবাহিনীর সদস্যরা সফলতার জন্য যেমন পুরস্কৃত হচ্ছেন, তেমনি প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতাও আছে। তবে দায়িত্ব পালনকালে রাজনৈতিক বাধাসহ নানা প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখিন হয় তারা। পুলিশসদস্যরা যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন এবং তাদের ওপর যদি কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিধিনিষেধ না থাকে, তাহলে সমাজ দ্রুতই অপরাধমুক্ত হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশ সবসময় স্বাধীনভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুলিশবাহিনীকে দায়িত্ব পালনে স্বাধীন দেখতে চাইলেও দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। চাকরি যাওয়ার ভয়ে পুলিশরাও তেমন উচ্চবাচ্য করেন না। আবার পুলিশবাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘সর্ষের ভূত’। একটি অংশ নিজেদের আখের ঘুচাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও পুলিশ নিজেই জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে। চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, গ্রেপ্তারবাণিজ্য এবং ছিনতাই ঘটনাসহ নানা অপকর্মে এরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে জড়িয়ে পড়েন। তারা সাধারণ মানুষকে রক্ষার পরিবর্তে নানা হয়রানির মাধ্যমে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন। এরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদের দ্বারাই ক্ষুণœ হয়েছে এবং হচ্ছে পুলিশবাহিনীর ভাবমূর্তি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অনেকের শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু এখনও পুলিশবাহিনীতে শতভাগ সৎ ও যোগ্য লোকদের সমাবেশ ঘটেনি। নিশ্চিত করা যায়নি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ফলে জঙ্গি দমনসহ নানা কাজে সাফল্যের পরও পুলিশকে সত্যিকার অর্থে ‘জনবান্ধব’ বলা যাচ্ছে না। রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?

wএ অবস্থায় পুলিশকে আক্ষরিক অর্থেই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠা সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামূলক বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। যথার্থ অর্থে একটি গণমুখী ও জনবান্ধব পুলিশবাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকার যে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। আমরা আশা করবো পুলিশবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আলোকে জনবান্ধব করার সব পদক্ষেপই নেয়া হবে। পুলিশবাহিনী তাদের কর্তব্য পালনে আরও নিবেদিত হবে। যেহেতু জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুখ্যত পুলিশ বাহিনীর, সেহেতু এই বাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোকদের নিয়ে আসতে হবে। কোনো অপরাধীর ঠাঁই যাতে পুলিশে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে পুলিশবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট