চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাতি দিয়ে বৃক্ষ উজাড়, শিকলবন্দি ১২ হাতি

লামা সংবাদদাতা

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৯:৫২ অপরাহ্ণ

লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হাতি দিয়ে গাছ উজাড়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক ত্রিপুরা যুবকের জানায়, দুর্গমে বৃক্ষ উজাড়ে ব্যবহৃত ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এসব হাতি দিয়ে বৃক্ষ উজাড়ের কারণে পরিবেশ ধ্বংস ও হাতি মালিকের দুরাচারে অতিষ্ট উপজাতিরা। পাহাড়ে অবস্থানরত উগ্রপন্থিদের সাথে হাতি মালিক, গাছ ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ ও চাঁদা আদান প্রদানের দাবি করছে স্থানীয়রা।

সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঈশ্বর চন্দ্র নামের এক ত্রিপুরা যুবকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লামা ইউনিয়নের দুর্গম পোপা এলাকায় ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এসব হাতির মালিক সিলেটের মৌলভীবাজারের মালয় কোম্পানি। জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে লামা-থানছি, তৎসংলগ্ন আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় সরকারি খাস অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বড় বড় বৃক্ষ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে এসব হাতি। হাতির মালিকদের সাথে প্রভাবশালী একটি কাঠ ব্যবসায়ী চক্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসব করে আসছে। এ চক্রটি পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে তাদের অবৈধ ব্যবসার কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পানসি পাড়ার এক মুরুং যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গমের ঘিলা পাড়া, পানসি পাড়া, লেংটা ঝিরি, শিল পাজা ও লাইল্যা পাড়া এলাকায় হাতি দিয়ে বড় বড় গাছ টানা হয়। এসব গাছের একাংশ লামার পোপা খাল দিয়ে নদী পথে উপজেলা সদরে এনে গাড়ীতে করে পাচার হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে সেনাবাহিনী আলীকদম জোনের অভিযানে লামা বন বিভাগ বেশ কয়েকটি হাতি আটক করেছিল। পরবর্তীতে এ নিয়ে মামলা হয় এবং আটককৃত হাতিগুলো ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে রাখা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততায় সম্প্রতি প্রভাবশালী ওই গ্রুপটি আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। বিনা অনুমতিতে হাতি রাখা ও হাতি দ্বারা শতবর্ষী নানা প্রজাতির মূল্যবান বৃক্ষ উজাড় করছে।

আরো জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী কাঠ ব্যাসায়ী একটি চক্র স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব করছেন। গ্রুপটি পাহাড়ের অশ্রেণিভুক্ত ভূমি থেকে শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির মা গাছ (মাদার ট্রি) উজাড় করছে। তারা এই কাজে ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার করে বিশাল আকারের শত বছর তারো বেশি বয়সী গর্জন, চাম্পাফুল গাছ কর্তন ও হাতি দ্বারা আহরণ করছে। এ ব্যাপারে হাতির মালিক মালয় কোম্পানীকে ফোন করা হলে, তিনি সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে চাননি।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু সংরক্ষিত বনাঞ্চল নয়, সেহেতু বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে পড়েনা। যদি লামা নদীপথে এসব গাছ আনা হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের লোকজন তা জব্দ করবে। পোপা ও লুলাইং মৌজায় যেখানে হাতি রয়েছে, দুর্গম এলাকা হওয়ায় বন বিভাগের পক্ষে কোন ব্যবস্থা নেয়া কষ্টসাধ্য। অশ্রেণিভুক্ত বন উজাড় বন্ধে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাস কিংবা অশ্রেণিভুক্ত বন রক্ষায় জেলা প্রশাসনের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর এ জান্নাত রুমি বলেন, বিনা অনুমতিতে হাতি দিয়ে গাছ আহরণ কিংবা হাতি রাখা আইনত দ্বন্ডনীয়। হাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

পূর্বকোণ/রফিকুল

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট