চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রোহিঙ্গা ভোটার সংগ্রহে জয়নালের পাঁচ দালাল

নাজিম মুহাম্মদ

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে অগ্রিম টাকা নিতো জয়নাল ও মোস্তফা ফারুক। টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হলে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিনিময়ে নির্বাচন অফিসে লাখ লাখ লেনদেনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে।
কাউন্টার টেরোরিজমের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো.শহীদুল্লাহ জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ডেকেছি। আজ (শুক্রবার) মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানানো হবে।

রোহিঙ্গা ভোটার তালিকাভুক্তির বিষয় তদন্ত করে ইতিমধ্যে ইসির একটি কারিগরি দল চট্টগ্রামে এসে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্তের সাথে যুক্ত ইসির আইটি বিশেষজ্ঞ মো. শাহাবুদ্দিন জানান, চার হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম থেকেই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এ সংখ্যা হয়তো বাড়তে পারে। চট্টগ্রামে বসে কোন ল্যাপটপ কিংবা কোন কর্মকর্তার মডেম ব্যবহার করা হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অগ্রিম টাকা নিতো জয়নাল। যে পাঁচজন দালাল জয়নালের কাছে নিয়মিত রোহিঙ্গা নিয়ে আসতো তারা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির মৃত জাফর উল্লার ছেলে নজিবুল্লাহ, কক্সবাজারের সাইফুল, আবছার, চকরিয়ার রফিক ও টেকনাফের আবু বক্কর। দালালের মাধ্যমে আসা রোহিঙ্গাদের আন্দরকিল্লার বাসায় ছবি উঠিয়ে তথ্য উপাত্ত গুছিয়ে মোস্তফা ফারুকের কাছে দিতো জয়নাল। একজন রোহিঙ্গা ভোটার করার বিনিময়ে জয়নাল পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা পেতো। মোস্তফাকে দিতে হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে কিছুদিন কাজ করার পর টাকার ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে মোস্তফার সাথে দ্বন্দ্ব হয় জয়নালের। ঢাকার সাগর চৌধুরীর মাধ্যমে রোহিঙ্গা ভোটার করার সুবিধা পেলে মোস্তফার কাছ থেকে দুরে সরে যায় জয়নাল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নজিবুল্লাহ’র বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ব্যবসায়ী পাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ মিয়ানমার থেকে এসে নাইক্ষংছড়িতে বসবাস শুরু করে। নাইক্ষংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পিয়ন জয়নাল ধরা পড়ার পর থেকে আত্নগোপনে রয়েছেন নজিবুল্লাহ।

গত সোমবার রাতে (১৬ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তারের পর নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল জানিয়েছিলো উচ্চমান সহকারী আবুল খায়রের মাধ্যমে দালাল নাজিবুল্লার সাথে পরিচয় রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজে খায়েরও জড়িত। ২০১৬ সালে খাইর যখন বন্দর থানার নির্বাচন অফিসে কর্মরত ছিলেন সেই সময় সবচেয়ে বেশী রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছেন। মোস্তফা আর আবুল খায়ের একই সিন্ডিকেটভুক্ত দাবি করে জয়নাল বলেন, প্রতিটি রোহিঙ্গা ভোটার করার বিনিময়ে সাগরকে ৩০/৩৫ হাজার টাকা দিলেই হতো। বেশী টাকা দাবি করায় মোস্তফার সাথে কাজ কমিয়ে দেয়। জয়নারের দাবি, নগরীর ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, বন্দর ও পাহাড়তলী ছয়ট্ িনির্বাচনী অফিসে ছয়জন থানা নির্বাচনী কর্মকর্তা রয়েছে। আর ছয়জনের কাছে ছয়টি মডেম রয়েছে। যা দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করা যায় । মোস্তফা কোন থানার নির্বাচনী কর্মকর্তার মডেম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করেছেন তা এখনো জানা যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট