চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাতকানিয়ায় শিশুকে হত্যা করে মাটিচাপা দিল চাচী

চাচা ও চাচী গ্রেপ্তার আদালতে জবানবন্দি

নিজস্ব সংবাদদাতা হ সাতকানিয়া

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ১৩ মাস বয়সী শিশু পুত্রকে নাক-মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মাটি চাপা দিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছে মারুফা আক্তার (২০) নামে এক পাষন্ড চাচী। ভাসুরের কাছ থেকে স্বামীর পাওনা টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে আসামি চাচী। হত্যার শিকার শিশুটি হলো-ইমরান হাসান শামীম। তার বাবা দুবাই প্রবাসী মামুনুর রশিদ ও মা রিমা আক্তার একজন গৃহিনী।

গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চরতি ইউনিয়নের সুঁইপুরা বনাঘোনা এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। হত্যার ৬ ঘণ্টা পর রাত সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। পুলিশ ঘটনার দিন রাতেই চাচী ও চাচাকে গ্রেপ্তার করে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার চাচী মারুফা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

স্থানীয়, মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বনাঘোনা এলাকার মৃত বাদশার মিয়ার ছেলে নুরুল আবছার মানিক (২৫) বিগত কয়েক বছর আগে সৌদি আরবে ছিল। সেখান থেকে বিভিন্ন সময়ে তার রোজগারের টাকা বিদেশ থেকে বড় ভাই মামুনুর রশিদ ও তার শ্যালককে কয়েক দফায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠায়। বিগত ৫ মাস আগে মানিক সৌদি আরব থেকে দেশে আসে এবং ৪মাস আগে ঘরের পার্শ্ববর্তী মামাত বোন মারুফা আক্তারকে বিয়ে করে। পাওনা টাকার জন্য ভাই মামুনকে বিভিন্ন সময় বললেও তিনি টাকা পরিশোধ করেনি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে প্রায় সময় তর্কাতর্কি হতো। বিগত ৪মাস আগে মামুন দুবাই চলে যায়। এরপর মামুনের স্ত্রীর সাথে দেবর মানিক ও তার স্ত্রী মারুফার মধ্যে টাকা পরিশোধের বিষয় নিয়ে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। বিগত সপ্তাহেও মারুফা আক্তারের সাথে হত্যার শিকার শিশুটির মা রিমা আক্তারের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়।

মামলার বাদি রিমা আক্তার বলেন, ঘটনার দিন আমি বিকাল ৪টার দিকে আমার শাশুড়িকে ছেলে শামীমকে দিয়ে বাড়ির উত্তর পার্শ্বে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যায়। শাশুড়ি আছরের নামাজ পড়তে বসলে শামীম আমার দেবর মানিকের ঘরে গেলে তার স্ত্রী মারুফা আমার ছেলের নাক-মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির পার্শ¦বর্তী নলকূপ সংলগ্ন মাটিতে চাপা দিয়ে তার লাশ গুম করতে চেষ্টা করে। ঘরে ফিরে ছেলেকে না পেয়ে আমি, শাশুড়ি ও প্রতিবেশিরা অনেক খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। এক পর্যায়ে নলকূপের পাশে নতুন ও নরম মাটি দেখে সন্দেহ হলে আমি ও প্রতিবেশিরা মিলে মাটি সরাতে গিয়ে প্রথমে একটি হাত দেখতে পায়। পরে সব মাটি সরিয়ে শামীমের লাশ উদ্ধার করি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মজনু মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সময়ই মামলার আসামি চাচী মারুফা আক্তার ও তার স্বামী চাচা নুরুল আবছার মানিককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ রাতেই শিশুটির মা রিমা আক্তার বাদি হয়ে আটককৃত ২জনকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ চট্টগ্রামের ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে এর আদালতে আসামি মারুফা আক্তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিউল কবীর বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি চাচী ও চাচাকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকালই শিশুটিকে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট