চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর

যাত্রী ছাউনি না থাকায় রোদে পুড়ছেন দশনার্থী

ছায়া পেতে বাদাম গাছই প্রধান ভরসা

ইমরান বিন ছবুর

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

সময় সকাল দশটা। মাথার উপর কড়া রোদ। বিমান বন্দরের বাইরের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলা। অন্যমনস্ক হয়ে থাকিয়ে আছেন টার্মিনালের দিকে। কিছুক্ষণ পর পর চোখের জল মুছছেন। মাথার ঘাম গড়িয়ে পড়লেও ওদিকে খেয়াল নেই তার। মহিলার নাম শাহেদা আক্তার। দুবাইগামী ছেলেকে বিদায় জানাতে তিনি বিমানবন্দরে এসেছেন। ছেলেকে আরো এক নজর দেখার অপেক্ষায় গ্যালারির দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ন্যায় যাত্রীর সাথে আসা আরো অনেক লোক বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। শাহেদা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বিশাল একটি বিমানবন্দরে যাত্রীর সাথে আসা স্বজনদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই। শত শত নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ রোদে পুড়ছে। গত মঙ্গলবার সকালের দৃশ্য এটি। বিমানবন্দরের তথ্য মতে, দৈনিক প্রায় ৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এসব যাত্রীদের সাথে আসা স্বজনদের জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বসার বা বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। রোদে পুড়ে অপেক্ষা করতে হয় স্বজনদের। রোদ থেকে বাঁচতে বাদাম গাছের নিচে বসে আশ্রয়

নিতে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বসয়ের নারী-শিশু ও পুরুষকে। এছাড়া অনেককেই দেখা যায় খালি ট্রলির উপর বসে থাকতে। দর্শনার্থীদের এই দুর্ভোগ চলতি বছরেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারওয়ার ই জামান বলেন, যাত্রীদের সাথে আসা মহিলা ও বৃদ্ধদের বসার জন্য টার্মিনালের প্রবেশ পথে ৫০টির বেশি সিট রয়েছে। এছাড়া, যাত্রীদের সাথে আসা স্বজন বা অতিথিদের জন্য আমরা দুটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের কাজ করছি। আগামী ডিসেম্বর মাসে যাত্রী ছাউনি দুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। এখানে ২০০ করে মোট ৪০০ জন বসার সিট থাকবে। এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমবে। তবে এটা সত্য যে, একজন যাত্রীর সাথে ১০ থেকে ১৫ জন অতিথি ও স্বজন বিমানবন্দরে আসেন। সবার জন্য সিটের ব্যবস্থা করা তো সম্ভব না।

যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত সীতাকু- থেকে আসা মো. সেলিম ও বিভিন্ন যাত্রীদের স্বজনদের সাথে কথা বললে তারা জানান, চট্টগ্রামের বিমানবন্দরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এর চারপাশে সবুজ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা যারা যাত্রীকে রিসিভ করতে বা বিদায় জানাতে আসি, আমাদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় ফ্লাইট মিস হয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, বিশেষ করে নারী ও বৃদ্ধদের বসার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়া, শিশুদের জন্য নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। টয়লেট যা আছে ওগুলো পর্যাপ্ত না এবং নোংরা থাকে। এগুলোর দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বিমান বন্দরে লোকবল বাড়েনি। এর ফলে যাত্রীদের সেবা দিতে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দ্রুত লোকবল নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। তবে শীঘ্রই জনবলের সমস্যা দূর হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
মাসকট থেকে আসা এক যাত্রী বলেন, বিমান বন্দরের পরিবেশ আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো বলা যায়। যাত্রী হয়রানিও কমেছে। তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। ট্রলির কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে এবং কিছু ট্রলির ব্রেক কাজ করে না। ফলে অনেক সময় মালামাল পড়ে যায়। তবে আগে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় আনসার সদস্যরা বকশিশ নামে পিছু নিতেন, এবার তা হয়নি। এছাড়া, যাত্রীদেরও কিছু ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দেশের বাইরে যাওয়ার সময় কোন জিনিস নেওয়া যাবে না বা কোন জিনিস কি পরিমাণ নেয়া যাবে সে ব্যাপারে ধারণা রাখতে হবে।

যাত্রী হয়রানি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের আনসার প্লাটুন কমান্ডার হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা দায়িত্ব পালন করছি যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য। কাউকে হয়রানি করার জন্য না। আমাদের আনসার জেলা কমান্ডার এবং বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক স্যারের পক্ষ থেকে যাত্রীদের যথাযথ সেবা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া, কোন আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগের প্রমাণ পেলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারওয়ার ই জামান ট্রলি স্বল্পতার কথা স্বীকার

করে বলেন, আমাদের বর্তমানে ৪৫০টি ট্রলি রয়েছে। আমরা নতুন ৩০০ ট্রলির অর্ডার করেছি। শীঘ্রই ট্রলিগুলো আসবে। যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের জন্য প্রতি মাসে দু’টি মিটিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের সব সংস্থাকে নিয়ে এসব মিটিং করা হয়। যাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতা করতে নির্ধারিত সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট