চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারে ১৯ কোটি টাকার সংস্কার কাজে হরিলুট

নিজস্ব সংবাদদাতা হ কক্সবাজার

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার জেলার ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া প্রায় ১৯ কোটি টাকার হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজ পেয়েছে ফরিদপুর এলাকার মেসার্স আজম

কনস্ট্রাকশন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামত গড়িমসি করে কাজ করছে। মানহীন এসব কাজের কোন সিডিউল না দিয়ে কাজের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারদের প্রতিনিধিরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বলে জানা যায়। এদিকে সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা। তাদের অভিযোগ সবাই মিলেমিশে ভাগ-বাটোয়ারা করছে। কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজের জন্য ১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৩ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬টি, চকরিয়ায় ২০টি, পেকুয়ায় ৮টি, রামুতে ১৮টি, টেকনাফে ১৩টি, উখিয়ায় ১৮টি, কুতুবদিয়া ৮টি এবং মহেশখালীতে ১৯টি সেইক্লোন সেল্টার মেরামত করা হচ্ছে। তবে এসব কাজ করতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাবের বলেন, আমাদের স্কুলের পুরনো সাইক্লোন শেল্টারটি বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে সেটার অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে সরকারিভাবে সেই সাইক্লোন শেল্টার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ আসে। কিন্তু সেখানে কী কাজ, কী পরিমাণ বরাদ্দ এসেছে, আমি ঠিকাদারের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে কোন কিছুই জানায়নি। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সেখানে দরজা জানালা বদলানো, রং করা, গ্রিল মেরামত করা, বিম এবং লোহার গ্রিল মেরামতসহ ফার্নিচার দেয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে যেভাবে কাজ হচ্ছে তা অত্যন্ত নি¤œমানের। তারা কোনভাবে বালির সঙ্গে অল্প সিমেন্ট মিশিয়ে খুবই নি¤œমানের কাজ করছে। আর দরজা জানালার কাজেও মারাত্মক অনিয়ম করছে। বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালেও কোন কাজ হয়নি।

একই এলাকার মধ্য খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, আমার স্কুলে সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। আর ঠিকাদারের পক্ষ হয়ে যারা কাজ করছে তারা আমাদের কোন সিডিউল বা কী কাজ ধরা আছে সেটার কিছুই জানায়নি। সে বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে আপনাদের যেভাবে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি সেভাবে বুঝে নেন এর বেশি কিছু জানার দরকার নেই বলে জানায় তারা।

খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমি উপজেলার মাসিক সভায় উত্থাপন করেছি। তবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এটা দুঃখজনক।

এদিকে, কুতুবদিয়া উত্তর ধুরং ইউনিয়নের ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, স্কুলের সাইক্লোন শেল্টারগুলো সংস্কার করার জন্য হঠাৎ করে কিছু লোক এসেছে। কিন্তু কী কাজ করবে? কত টাকার কাজ করবে? সেটার বাজেট কত? সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি। বরং তাদের জন্য আমাদের অনেক সহযোগিতা করতে হচ্ছে।
ওামু ও চকরিয়ায় বেশ কয়েকটি স্কুলে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, যেখানেই সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজ হচ্ছে, সেখানেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক জনপ্রতিনিধিও সন্তুষ্ট নয় বলে জানা গেছে।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজ বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেক অভিযোগ শুনেছি, সে বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে মৌখিক ভাবে বলাও হয়েছে। মাসিক সভায়ও আলোচনা হবে। এ ব্যপারে কক্সবাজার এলজিইডির সহকারী মো. তানভীর জলিল বলেন, সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। এখনও কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। তবুও যে সমস্ত জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, কোন কাজে অনিয়ম দুর্নীতি কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সব কাজ ভাল করে তদারকি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট