চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

অবৈধ বালু উত্তোলন

অসংখ্য বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন

বাঁশখালী বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে চরম আকার ধারণ করেছে নদীর ভাঙন ।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার শঙ্খ নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উপজেলা বিএনপি নেতা ও পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন ঠিকাদারী কাজের জন্য বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে খানখানাবাদের চৌধুরী ঘাটে গত ১ সপ্তাহ ধরে এক দলীয় নেতা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে শঙ্খ নদীর উভয় পাশের কূল কিনার ভেঙে যাচ্ছে। গত ১ মাসে শঙ্খ নদীর কূল ভেঙে পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছি পাড়ায় ও সাধনপুর ইউনিয়নের জেলা পাড়ায় অন্তত ৪০টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই সমস্ত পরিবারের ৫০ কোটি টাকার সম্পদ ও মালামাল ক্ষতি হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহোৎসব নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক সমালোচনা। নদী শাসনের দায়িত্বে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই প্রতিদিন পুকুরিয়ার তেচ্ছি পাড়া ও খানখানাবাদের চৌধুরীঘাট এলাকায় শঙ্খ নদীতে তোলা হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট বালু। এই বালু উত্তোলনের কারণে তেচ্ছি পাড়া অংশে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে শত শত বসতঘর গ্রাস করে নিচ্ছে শঙ্খ নদী। নদীর দু’পাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে।

অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছি পাড়া ও খানখানাবাদের চৌধুরীঘাট ও সাধনপুরের জেলেপাড়া শঙ্খ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার ও সোমবার এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুকুরিয়া ইউপির তেচ্ছি পাড়া শংঙ্খ নদীর উপর নির্মিত সেতুর নিচে বালু ব্যবসায়িরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এই সময় তেচ্ছি পাড়া এলাকার ছাবের আহমদ জানান, গত ৮ দিন ধরে চেয়ারম্যানের লোকজন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। ভাঙন রক্ষার নাম দিয়ে কোটি কোটি টাকার এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। খানখানাবাদ চৌধুরী ঘাট অংশে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ারা-বাঁশখালী জুইদ-ী ঘাট পারাপারের বাঁশখালী অংশ থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন বালু ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী শাসনের দায়িত্বে থাকা বাঁশখালী গুনাগরি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা পর্যায়ে অফিস ও বাসভবন রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এলাকায় অবস্থান না করে চট্টগ্রাম শহরে বিলাস বহুল ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে অবস্থান করছেন। এইজন্য বালু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়াভাবে শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছে। বাঁশখালীতে পাউবোর অফিস কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও বহদ্দারহাট কেন্দ্রীয় অফিসে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কারণে যা হবার তাই হচ্ছে।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খানখানাবাদ পোল্ডার নং ৬৪/১-এ ও পোল্ডার নং ৬৪/১-বি সাধনপুর ও পুকুরিয়া অংশে ঘূর্ণিঝড় ফনীতে ক্ষতিগ্রস্ত আপদকালীন জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় ঠিকাদারী কাজের জন্য ৩ মাস পূর্বে কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি কাজ হিসাবে জিও ব্যাগ ভর্তি বালু ব্যবহারের জন্য পাউবো নির্দেশ দেন। বাহির থেকে বালু ক্রয় করে এনে জিও ব্যাগ ভরে কাজ সম্পাদনের কথা থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আবার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা পানির টাকা পানিতেই ফেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
সাধনপুরের জেলে পাড়ার বাসিন্দা শংকর জলদাস বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে জেলে পাড়ায় গত ১ মাসে অন্তত ১৮টি বসত ঘর ভেঙে গেছে।

পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা আসহাব উদ্দিনের শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে ১ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হবে। বাঁশখালীর খানখানাবাদ ও বাহারছড়ায়ও বালু উত্তোলন হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে অবস্থানরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহেরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলে বালু উত্তোলন করা যাবে। শঙ্খ নদীর যে কোন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে কূল ভাঙবেই। বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অনুমতি পেলে সরকারি কাজে বালু ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দর থেকে কোন অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ খ.ম. জুলফিকার তারেকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায় নি।

এই ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী বলেন, শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। ভাঙন স্থান থেকে কোন অবস্থাতেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার সুবিধা হবে। শঙ্খ নদীর ভাঙনের কারণে ওই এলাকায় অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অনেকবার বাঁধা দেয়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে কিছুদিন পূর্বে ড্রেজার মেশিন জব্দসহ আটক ও জরিমানা আদায় করা হয়েছিল। কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট