চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভাগ্য ফেরাতে কলা চাষ

রিকশাচালক জসিমের সাফল্যের কাহিনী

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

রিকশা চালানোর আয় দিয়ে সংসারের ব্যয় মিটানো কষ্টসাধ্য। তাই বাড়তি আয়ের উৎস বের করার চিন্তা করতে গিয়ে মাথায় আসে কলা চাষের বিষয়টি। ছেলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য বাড়তি আয়ের কথাটি ভাবতে হয়েছে। এখন এক বেলা রিকশা চালাই। আরেক বেলা কলা বাগানে কাজ করি। নিরন্তর জীবন সংগ্রামে লিপ্ত মো. জসিম উদ্দিনের কলা চাষের কাহিনী এটি। জসিম উদ্দীনের জন্ম ভোলা জেলায়। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। জসিম উদ্দিন বলেন, বাবা-মা অল্প বয়সে আমাকে বিয়ে দেয় আমাদের পাশের গায়ের এক মেয়ের সাথে। একেতো অভাবের সংসার। তার উপর নতুন বউ। বাবার বয়স হয়েছে তাই আমাকেই এদিক সেদিক কাজ করে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু সংসারে অভাব লেগেই থাকে। তার মধ্যে আমার দুই মেয়ের জন্ম হয়। সংসারে অভাব আরো বেড়ে যায়। তখনই ভাবি, যদি শহরে চলে যাই তবে আমার সন্তানদের সুন্দরভাবে পড়াশোনা করিয়ে সংসার চলতে পারবো। এই ভাবনা থেকেই পরিবার নিয়ে বারো বছর আগে ভোলা জেলা থেকে চট্টগ্রামে আসি। হঠাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এসে পরিবার নিয়ে আরো কষ্টে পড়ে যাই। কাজ না পেয়ে শেষে এক রিকশা কোম্পানি থেকে একটি রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতে শুরু করি। কিন্তু এটাতো শহর, তাই আমার একার আয় দিয়ে খেয়ে পড়ে

মেয়েদের পড়াশোনা করানো কষ্টকর। ভাবতে থাকি আরো কিছু করা যায় কিনা। তখন আমার হঠাৎ মাথায় আসে এলাকায়তো অনেক খালি জায়গা পড়ে আছে। আমি যদি মালিক থেকে এই খালি জায়গাগুলো নিয়ে যেকোন একটি ফলের চাষ করতে পারি তাহলেতো আমি আরো সচল হতে পারি। তারপর জায়গার মালিকদের সাথেও কথা বলি। অনেকে রাজি হয়নি। বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোড ল্যান্ডমার্ক এলাকায় একজন থেকে একটি প্লট নিয়ে সেখানে কলার চাষ শুরু করি। তারপর আরো দুইটা জায়গা নিয়ে বর্তমানে তিনটি জায়গায় কলার চাষ করছি। এ জায়গাগুলোও একই এলাকায়। এখন প্রায় দুই একর জায়গায় কলার চাষ করছি। বছরে দুইবার ফল পাই। বছরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করি। কলা চাষে অনেক খরচ না হলেও সেইভাবে লাভের মুখ এখনো দেখিনি। পরিশ্রম বেশি আর বছরের বারো হাজার টাকা করে জায়গার মালিককে দিতে হয়। বর্তমানে তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের পিতা। স্ত্রী আকলিমা বেগমসহ পাঁচ সদস্যের সংসার তার। বড় মেয়ে গত বছর পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বর্তমানে বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।

জসিম উদ্দীন বলেন, সকালে কলা বাগানে সময় দিতে হয়। আর বিকেলে রিকশা চালাই। আমার আশা মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট