চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

৬ ইউপি’র লক্ষাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগ

ঠিকাদারের গাফেলতিতে বাঁশখালী শেখেরখীল মৌলভীবাজার নির্মাণাধীন সেতু

অনুপম কুমার অভি ম বাঁশখালী

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের জলকদর খালের ওপর নির্মাণাধীন মৌলভী বাজার সেতুটির কাজ সমাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সম্ভাব্য মেয়াদকাল শেষ হলেও সেতুটির ৭০ ভাগ কাজ এখনো বাকি রয়েছে।
সাময়িক যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা তক্তার সাঁকোও ইতিমধ্যে নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় সাঁকো দিয়ে রোগী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিকসহ দৈনিক সহস্রাধিক বিভিন্ন পেশার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে বাধ্য হচ্ছে। সেতুটির উভয় পাশে বৈদ্যুতিক আলো না থাকায় বিশেষ করে রাতে ওই সেতু দিয়ে পারাপারে দুর্ঘটনা ঘটছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এ সড়কে যাতায়াতকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাপড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী ও গৃহপালিত পশু পারাপারে ৬ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা এখন সাধারণ মানুষের একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে (এলজিইডি) ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা) এর আওতায় ছনুয়া-শেখেরখীল সড়কের মৌলভী বাজার জলকদর খালের ওপর ৩৬.২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি কাজ পায়। চুক্তির মূল্য ৩ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ৫০১ টাকা। কাজের চুক্তির তারিখ ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট এবং কাজ সমাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ২০১৮ সালের ১৫ মে সেতুটির আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। উদ্বোধনকালে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কাজের মান সঠিক রেখে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে কাজ সমাপ্তির সম্ভাব্য মেয়াদকাল ৭ মাস আগে পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সেতুটির ৩০ ভাগ কাজও সম্পন্ন না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

সম্প্রতি শেখেরখীল জলকদর খালের ওপর নির্মিত সেতু পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলে এই প্রতিবেদককে জানান, সেতু নির্মাণে দেরি করায় রোগী, গরু-মহিষসহ ভারী জিনিসপত্র নিয়ে পারাপারে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির লাশও পারাপার করতে হচ্ছে নৌকা দিয়ে। বাঁশের ওপর তক্তা দিয়ে খালের ওপর নির্মিত ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি হলে পা পিছলে খালের পানিতে পড়ে যাচ্ছে অনেকে।

মৌলভী বাজার সেতুটি ব্যবহার করে কুতুবদিয়া উপজেলার দুই ইউনিয়ন ও বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখীল, গ-ামারা ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। তারপরেও পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ তক্তার সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। কয়েক মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও এলাকাবাসী জানান।
প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন নাপোড়া শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের আসা শিক্ষার্থী জাফর আলম, আবু নঈমসহ আরো অনেকে জানান, প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তক্তার সেতুটিতে উঠলেই মনে হয় যেন ভেঙে পড়বে। তবুও বাধ্য হয়ে ওই তক্তা দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। ছাত্ররা এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে না? কবে আমরা সাইকেল নিয়ে সেতুটি দিয়ে আসা-যাওয়া করবো? আমাদের স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত সাইকেলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।

শেখেরখীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন জানান, মৌলভী বাজার সেতুটির নির্মাণ কাজ বর্তমানে অর্ধেক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দ্রুত কাজ সম্পাদনের জন্য মাসিক সমন্বয় সভায় অনেকবার আলোচনা করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে গাফিলতি করায় এই অবস্থা হয়েছে।

তাই সেতুটির নির্মাণকাজ অচিরেই সমাপ্ত করতে মাননীয় সাংসদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, মৌলভী বাজার ব্রিজের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট