চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আইয়ুব বাচ্চুর ‘রূপালি গিটার’র উদ্বোধন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৬:২৮ অপরাহ্ণ

‘এই রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে। সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো, গোপন করে…।’ কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা বরেণ্য শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ফেলে যাওয়া রূপালি গিটার ফিরে আসছে, এই নগরে। চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে বসানো হয়েছে খ্যাতিমান শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ‘রূপালি গিটার’।      

ইতোমধ্যে গিটার স্থাপন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে এই রূপালি গিটার বসানো হয়েছে। থাকছে একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা এবং আইয়ুব বাচ্চুর জীবনী।   

চসিক মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাসেম জানান, ‘আইয়ুব বাচ্চুর নিজ জন্মস্থান এই চট্টগ্রাম। জন্মস্থানে কিংবদন্তী এ শিল্পীকে স্মরণ করে রাখতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে ‘রূপালি গিটার’ এর আদলে একটি প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। আগামীকাল সন্ধ্যায় চসিক মেয়র এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ গিটারের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম আইয়ুব বাচ্চুকে মনে রাখবে, বেঁচে থাকবে তাঁর গান।’      

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু গত বছর ১৮ অক্টোবর চলে যান না ফেরার পথে। গিটারে আঙুলের স্পর্শ আর অসাধারণ গায়কিতে তিনি কেবল সঙ্গীতানুরাগীদের মাতোয়ারা করেননি, দেশের  ব্যান্ড সঙ্গীতকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করেছেন। গিটারের সুরের সঙ্গে কণ্ঠের কারুকার্যে এ দেশের অগণিত সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন সঙ্গীত আঙিনার এই রাজকুমার। কেবল দেশে নয়, বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও তিনি বাংলাদেশের ব্যান্ডের গানকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। 

১৯৭৭ সালে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। তার প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর যোগ দেন সোলেস। ১৯৮০ থেকে পরবর্তী এক দশক এই ব্যান্ডে যুক্ত ছিলেন। সোল্স ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। প্রথমে এলআরবির পূর্ণ অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে এই নামে অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি ব্যান্ড থাকায় বদলে করা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’। ১৯৮৬ সালে ‘রক্তগোলাপ’ নামে তার প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু ‘এলআরবি’ ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো।

১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ পুরো দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এর মধ্যে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে।

পূর্বকোণ/পলাশ 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট