চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বড় ঝুঁকিতে ‘পরিত্যক্ত’ বেপজা ফুটওভার ব্রিজ

নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি হ পাশেই ঘেঁষা ৩৩ কেভিএ বিদ্যুৎ লাইন হ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার পথচারীদের হ সমন্বয়ের অভাব : পিডিবি প্রকৌশলী হ ‘বিশেষ শেড’ দেয়া হবে: বেপজা

আল-আমিন সিকদার

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

শ্রমিকদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য নগরীর ইপিজেড মোড়ে আরো একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রস্তুতকারক জোন (বেপজা) কর্তৃপক্ষ। ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ ফুটওভার ব্রিজটি নগরীর বৃহত্তম ফুটওভার ব্রিজ বলে জানায় বেপজা কর্তৃপক্ষ। ব্রিজটি নির্মাণ শেষে বেপজাকে বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রাইডক লিমিটেড। তবে কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসেও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি ব্রিজটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন ঘেঁষে নির্মাণ করায় ঝুঁকিতে পড়েছে ব্রিজটি। নির্মাণের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শ না নেয়ায় অনাকাক্সিক্ষত এ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তাই ব্রিজটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারছে না বেপজা কর্তৃপক্ষ। এদিকে খেসারত হিসেবে ব্রিজটি চালু করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেপজা কর্তৃপক্ষ। উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ থেকে ব্রিজ ব্যবহারকারীদের রক্ষা করতে বসানো হবে ‘বিশেষ শেড’। তবে এ খেসারতের মূল্য জানাতে অস্বীকার করেন বেপজার দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেইন।
‘বিশেষ শেড’ বসানো প্রজেক্টের ব্যয়ের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাকে আমার এ তথ্য দেয়ার রাইট নাই। এটা আমার জিএম সাহেবের কাছে শুনিয়ে তারপর দিতে পারবো।’

ঝুঁকি থাকায় ব্রিজটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানান বেপজার মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ব্রিজের পাশ ঘেঁষে উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন চলে যাওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে। সতর্কতার জন্যই ব্রিজটি উন্মুক্ত করা হচ্ছে না। তবে ব্রিজটি যাতে দ্রুত চালু করা যায় এজন্য বেশ কয়েকবার পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) এর সাথে বৈঠকে বসেছি। দু’একদিনের মধ্যে ব্রিজের দুই পাশে বিদ্যুৎ লাইনের নিচ দিয়ে ছোট দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। আশা করছি এর এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিজটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কওে দেয়া হবে।’
ব্রিজটি নির্মাণে পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে কথা বলে এবং অনুমতি নিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করেছি। পরিকল্পনায় কোন ঘাটতি ছিল না। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আমরা কথা বলেছি এবং বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেছি।’

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে বেপজা কোন আলোচনা করেন নি বলে জানান বিদ্যুতের নিউমুরিং বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. মাহফুজুল হক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নির্মাণ কাজ শুরুর আগে বেপজা পিডিবির সাথে কোন আলোচনা করেনি। যখন আটকে গেছে তখন আমাদের জানিয়েছে। সমন্বয়ের অভাবেই এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ধরেন, আমরা মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে যাবো। আমরা এ কাজে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও সিডিএর সাথে বৈঠক করে পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজটি করবো। এখন যদি, আমি নিজে মাটি কেটে কাজ শুরু করে দেই তাহলেতো সমস্যায় পড়তেই হবে। এ কাজটি শুরুর আগে অবশ্যই বেপজার প্লান করে নেয়া উচিত ছিল। ব্রিজটি ব্যবহার করলে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। কারণ, ব্রিজটি ঘেঁষে চলে গেছে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন। যা যেকোন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।’

কীভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করা যেত জানতে চাইলে এ বিদ্যুৎ প্রকৌশলী বলেন, ‘ব্রিজটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই এর উচ্চতা যতটা কমানো যায় ততটা কমিয়ে করতে বলতাম। এতে ঝুঁকির আশংকা কমে যেত।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ইপিজেড থানাধীন ফ্রিপোর্ট মোড়ে সিইপিজেডের প্রবেশ মুখের ঠিক সমনে নির্মাণ করা হয়েছে তৃতীয় এ ফুটওভার ব্রিজটি। এর আগে ২০০৭ সালে কারখানা শ্রমিকদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য এ মোড়ে একযোগে দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছিল বেপজা কর্তৃপক্ষ। তবে নির্মাণ শেষে গত তিন মাসেও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়নি ব্রিজটি। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ব্রিজটির সিঁড়ির মুখগুলো। তবুও এর ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি ব্যবহার করছে শ্রমিকরা। ছুটির সময় বাকি ফুটওভার ব্রিজগুলোতে শ্রমিকদের চাপ বেশি থাকায় দ্রুত রাস্তা পার হতে এ ঝুঁকি নিচ্ছে শ্রমিকরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট