চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

খামারে ঢুকে গরু লুটের দৃশ্য সিসিটিভিতে

পটিয়ায় গরু চুরির হিড়িক হ লক্ষাধিক টাকার মহিষসহ ৬ জন

হারুনুর রশিদ ছিদ্দিকী

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

গ্রেপ্তার, আতঙ্কে খামারিরা
হ সন্দেহের তালিকায় রোহিঙ্গারা

হ পটিয়া

হঠাৎ করে পটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা ঘটছে। সংঘবদ্ধ চোরের একের পর এক হানায় আতঙ্কে রয়েছে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ শতাধিক খামারি। রবিবার গভীর রাতে পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কালা মসজিদ এলাকার মো. মফিজের তদবির নামের একটি খামারে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্রধারী গরু চোরচক্র খামারে ঢুকে ৪টি গরু লুট করে নিয়েছে। খামারের দুই দারোয়ানকে রশি দিয়ে বেঁধে প্রায় ৭ লাখ টাকার গরু নিয়ে যায়। গভীর রাতে খামারে প্রবেশ, গরু লুটের দৃশ্য সিসিটিভিতে রেকর্ড হয়েছে। একইদিন রাতে উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়ন থেকে লক্ষাধিক টাকার একটি মহিষ চুরি করে পিকআপে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পটিয়া থানার টহল পুলিশ ৬ গরু চোরকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো- কেলিশহর গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত আবদুল মালেকের পুত্র মো. সুজন (২০), মো. আলমগীরের পুত্র মো. পারভেজ (২৫), জসিম উদ্দিনের পুত্র মো. সায়েম (১৮), লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এলাকার আবদুর রশিদের পুত্র মো. আলমগীর (২৬), সুলতান আহমদের পুত্র আবদুস ছবুর (৩৫) ও সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর ছদাহ এলাকার আহমদ মিয়ার পুত্র জামাল হোসেন (২৬)।

খামারি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কর্ণফুলী উপজেলার ৫ ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক খামার রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সম্প্রতি পটিয়া উপজেলায় গরু চুরি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, শোভনদন্ডী, কুসুমপুরা, হাবিলাসদ্বীপ, কোলাগাঁও, জিরি, আশিয়া, কাশিয়াইশ, বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, ছনহরা, ভাটিখাইন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। খামারিদের অভিযোগ, গরু চুরির পর থানায় অভিযোগ কিংবা মামলা নিয়ে গেলে পুলিশ তাদের মামলাটি রেকর্ড করে না। যার কারণে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আবদুল হকের পটিয়া খামার থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকার ৬টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। গরু চোর চক্রটি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে খামারের দারোয়ানকে রশি দিয়ে বেঁধে অস্ত্রের ভয়ে দেখিয়ে লুট করে। এ ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন পটিয়া থানার এসআই মো. মাকসুদুল হক। একইভাবে জিরি ইউনিয়নের একটি খামার থেকে ৬টি গরু চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আল ওয়ালী এগ্রো খামারের নৈশপ্রহরী মো. ইসহাক (৪৫) পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। কোরবানি ঈদের শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গরু চুরি বেড়েছে। কোরবানি ঈদের সময় কুসুমপুরা ইউনিয়ন এলাকায় অস্ত্র ধরে ৪টি গরু, পটিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের গাজী বাড়ির আবু তাহেরের ২টি গরু, সুচক্রদ-ী এলাকা থেকে ১টি গরুসহ গত তিন মাসে প্রায় ৪০টির অধিক গরু চুরি হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোহিঙ্গারা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কচুয়াই ইউনিয়নের তদবির ডেইরি খামারের মালিক মো. মফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের খামার থেকে ৪টি লুট করে নিয়েছে। যা ভিডিও ফুটেজে সংগ্রহ রয়েছে। তিনি বাদি হয়ে পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। জিরি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পটিয়া খামারের খামারি আবদুল হক জানিয়েছেন, গরু চোরের চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন বাজারের কসাইও। তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন খামার থেকে গরু লুট করে নিচ্ছে। অস্ত্র ধরে তার খামার থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকার ৩টি বাছুরসহ ৬টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি থানায় একটি মামলাও করেছেন।

পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গরু চুরির ঘটনা বাড়লেও জনগণের কোন সহযোগিতা তিনি পাচ্ছেন না। গরু চোর দমাতে হলে পুলিশের পাশাপাশি খামারিসহ এলাকার সচেতনমহলকে ভুমিকা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট