হ দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ জব্দ
হ অধরাই রইলো মূলহোতা হাকিম
হ ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার চার
হ রাউজান
রাউজানের নোয়াপাড়ায় পথেরহাটে যৌনসহ সর্বরোগের ইন্ডিয়ান ওষুধের নকল হারবাল ওষুধ তৈরির কারখানা ও শো-রুমে গতকাল সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ জব্দ এবং চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম, কাগজপত্র। রাত ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত র্যাব সেখানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে এবারের অভিযানেও এই নকল ওষুধ তৈরির মূল হোতা, দেশের অন্যতম প্রতারক আবদুল হাকিম ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলো।
গতকালের অভিযান সর্ম্পকে চট্টগ্রাম র্যাব-৭’র চান্দগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, পথের হাটের আমীর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দেশ হারবাল নামের একটি নকল হারবাল তৈরির বিশাল নকল কারখানা-গোডাউন, শো-রুমে সোমবার ১১টা থেকে র্যাব-৭’র সদস্যরা অভিযান চালায়। অভিযান এখনো (রাত পৌণে ৮টা পর্যন্ত) চলছে। নকল কারখানা ও গোডাউনে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার নকল ওষুধের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো আমরা জব্দ করছি। এই ঘটনায় নকল ওষুধ তৈরিতে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ইমরান আলী, মো. হাসান, জসিম উদ্দিন প্রকাশ ইউছুপ, মো. নাঈম। চট্টগ্রাম র্যাব-৭’র চান্দগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান আরো জানান, দেশ হারবাল নামের এ ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি যৌনসহ বিভিন্ন নকল ওষুধ তৈরি করে ইন্ডিয়ান ওষুধ বলে নানা মোড়ক লাগায়। এ ওষুধের গুণাগুন সর্ম্পকে ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচার, লিফলেটের মাধ্যমে নানাভাবে প্রচার করে। মোবাইল এবং অনলাইনে অর্ডার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীদের ওষুধ পাঠিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে প্রতারণা করে। তিনি জানান, আগে তারা কলিকাতা হারবালসহ বিভিন্ন নামে এ ভুয়া নকল ওষুধ বিক্রি করতো। এখন দেশ হারবালের নামে এ প্রতারণা চালাচ্ছে। তিনি জানান, গত এপ্রিল মাসে এই দেশ হারবালের ব্রাহ্মণ হাটের পাশে কারখানা থেকে বিপুল সংখ্যক নকল ওষুধ জব্দ করা হয়েছিল। এবার নকল ওষুধের পরিমাণ আরো বেশি পাওয়া গেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের আলী মদনের ছেলে আবদুল হাকিম নামের এক লম্পট, দুস্কৃতিকারী, মাদকসেবী বহু বছর ধরে দেশ হারবাল, কলিকাতা হারবালসহ বিভিন্ন নামে ইন্ডিয়ান হারবাল ওষুধ নাম দিয়ে ভুয়া, নকল ওষুধ তৈরির কারখানা করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। সে ভারতীয় চ্যানেলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চ্যানেলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের আকর্ষণ করে কুরিয়ার সার্ভিসসহ নানাভাবে ওইসব ওষুধ পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবদুল হাকিম বহু বছর ধরে এসব নকল ওষুধ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে। গড়ে তুলেছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি। সে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে এসব কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সময় তার এসব নকল কারখানায় র্যাব, ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালেও সে স্বল্প সময়ে পুনরায় তার ওই কর্মকা- শুরু করে। কয়েক বছর আগে আবদুল হাকিম আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও সে পুনরায় আইনের ফাঁকে বেরিয়ে আসে। পুনরায় তার ভুয়া ওষুধ কারখানা এবং ওষুধ ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।
র্যাব জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে ব্রাহ্মণ হাটের পাশে নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালানোর পর সে সেটাকে শুধুমাত্র ‘কাস্টমার সার্ভিস’ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এখন মূল কারখানা, ওষুধ বিক্রি, অর্ডারের স্থান করেছে পথের হাটের আমীর মার্কেট। এখানে এই ভুয়া কারখানায় প্রতিনিয়ত ওইসব ওষুধ তৈরি, অর্ডার নেয়া এবং বিক্রি করা হচ্ছে।