চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহাসড়কসহ ২ শতাধিক রাস্তা ভেঙে খান খান

কক্সবাজার-টেকনাফ

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

ভারি বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কসহ ২ শতাধিক গ্রামীণ সড়ক ভেঙে খান খান হয়ে পড়েছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমানে এসব সড়ক দিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ভিআইপি, ভিভিআইপি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধারণের যাতায়াতে দুঃখ-দুর্দশার অন্ত নেই। গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার সর্বত্র টানা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর গত ২ দিন বৃষ্টি না হলেও দিন যত যাচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র ততই প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে।
টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফ উপজেলার জাদিমোরা, মোচনী, লেদা, হ্নীলা, মৌলভীবাজার, খারাংখালী, নয়াবাজার, মিনাবাজার, নয়াপাড়া, কানজরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, উঞ্চিপ্রাং, লম্বাবিল, হোয়াইক্যং, তুলাতলি,্ কাটাখালী, চাকমারকুল, উখিয়া উপজেলার পালংখালী, জামতলী, থাইংখালী, বালূখালী পানবাজার, কাস্টমস, কুতুপালং, উখিয়া, রাজাপালং, কোটবাজার, মরিচ্যা বাজার এলাকার প্রধান সড়ক গত কয়েকদিনে প্রবল বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বত্র সড়কে সৃষ্ট পুকুরসম গর্ত এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হওয়া গর্ত মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এতে প্রায়শই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বাস-ট্রাক আটকে গিয়ে কিংবা ইঞ্জিন বিকল হয়ে দীর্ঘসময় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আবার বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর পাহাড়ি কাদামাটি জমে ওঠায় যান চলাচলে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণে সড়কের ওপর নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ঢলের স্রােতে বিভিন্ন স্থানে তলিয়ে যায় সড়কের দু’পাশ।

টেকনাফ উপজেলার নয়াবাজার প্রধান সড়কের ভাঙা অংশে পণ্যবাহী ট্রাকের ইঞ্জিন বিকল হয়ে প্রায় সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। প্রতিনিয়ত ভাঙা অংশে যানবাহন দুর্ঘটনায় ব্যাপক দুর্ভোগ দেখা দিলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন খবর নেই। অদ্যাবধি সড়ক মেরামতে সওজের কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি।
১০ সেপ্টেম্বর টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কের ভাঙা অংশে গাড়ি আটকা পড়ে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়লে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশ স্ব উদ্যোগে ইট, কংকর ও বালির বস্তা দিয়ে সড়ক মেরামতের মাধ্যমে যান চলাচল স্বাভাবিক করলেও উক্ত স্থানে দুর্ভোগের অন্ত নেই।

এদিকে নয়াপাড়া বটতলী এলাকায় সড়ক ধসে পড়ার চিত্র আরো ভয়াবহ। এ স্থানে দিবারাত্রি প্রায়শই যানবাহন আটকে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর উঞ্চিপ্রাং প্রধান সড়কে পণ্যভর্তি ট্রাকের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়লে ২ দিন ধরে সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে মিনাবাজার, কুতুবদিয়াপাড়া, লম্বাবিল হোয়াইক্যং তুলাতলি এলাকার প্রধান সড়কে পাহাড়ি কাদামাটি নেমে আসায় দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
এছাড়া উখিয়া উপজেলার থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী কাস্টমস, কুতুপালং প্রধান সড়কে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়ে প্রতিদিন যানবাহন আটকে পড়ে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ সড়ক, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, হাবিরপাড়া, গোদার বিল, পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, পল্লানপাড়া, নতুন পল্লানপাড়া, কায়ুকখালীপাড়া, কলেজপাড়া, শীলবনিয়াপাড়া ও উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া বাজার হতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের সংযোগ সড়ক, মনখালী চাকমাপাড়া সড়ক ও ফরেস্ট অফিস, শীলখালী-দক্ষিণ শীলখালীসহ টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২ শতাধিক গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার ১ নং হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘হোয়াইক্যং-বাহারছড়া সড়ক, উঞ্চিপ্রাং-পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সড়ক, কানজরপাড়া-রইক্যং সংযোগ সড়ক, নয়াপাড়া বটতলী-মগপাড়া রাস্তা, নয়াবাজার-সাতঘরিয়াপাড়া রাস্তা, খারাংখালী-মহেশখালীয়াপাড়া-কম্বনিয়াপাড়া সড়কসহ প্রায় ৩০টির মতো গ্রামীণ সড়কের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে’।

রইক্ষ্যং শেখ রাশেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি আব্দুল বাছেদ জানান, ‘উঞ্চিপ্রাং-পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সড়কটি মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ার কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে’।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার-লামারপাড়া, রোজারঘোনা সড়ক, আলীআকবরপাড়া সড়ক, লেচুয়াপ্রাং সড়ক, হ্নীলা স্লুইচপাড়া, গুদাম পাড়া, জালিয়াপাড়া, রঙ্গীখালী লামারপাড়া, লেদা লামারপাড়া পানখালীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামীণ সড়ক পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে’।
টেকনাফ উপজেলায় কর্মরত সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘প্রবল বৃষ্টির কারণে সড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি বন্ধ হলে জরুরি ভিত্তিতে সড়কের সংস্কার কাজ আরম্ভ করা হবে’।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সরেজমিনে তদারকি করার কাজ চলছে। এ উপজেলায় শতাধিক গ্রামীণ রাস্তার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে’।

উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে টেকনাফ উপজেলায় প্রতিটি সেক্টরেই ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। আমি নিজেও বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট