চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মূল হোতা শিক্ষক মাহবুব!

বায়েজিদে ভোটার নিবন্ধনে রোহিঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

মোটা অংকের লেনদেনে
জড়িত রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট

বায়েজিদ বোস্তামী থানার আরেফিন নগরের এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটি গেট এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান। ওই সুবাধে এলাকার মানুষ তার কাছে ছুটে আসেন জন্মসনদ, জাতীয়তা সনদ কিংবা ভোটার তালিকা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে। ভুক্তভোগীদের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ‘বিশেষ’ ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিয়ে নিজেই ওইসব কাগজপত্র তৈরি করে দেন, এমন জনশ্রুতি রয়েছে এলাকাজুড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা নাগরিকেরও জন্মসনদ তৈরি করে দেন তিনি। এবার ওই স্কুলেই চলছে ভোটার হালনাগাদ নিবন্ধন কার্যক্রম। এরমধ্যেই অভিযোগ ওঠে বহু রোহিঙ্গার জন্ম ও জাতীয়তা সনদ তৈরির কাজে জড়িত মাহবুবুর রহমান এবার রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার সুযোগ

করে দিচ্ছেন। এ জন্য মোটা অংকের টাকার লেনদেন করেছে রোহিঙ্গাদের একটি সিন্ডিকেট। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গত পাঁচদিন ধরে গা ঢাকা দিয়েছেন মাস্টার মাহবুব। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল বিকেলে বিকল্প একটি মোবাইল ফোন থেকে মাস্টার মাহবুব এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই আমি মাহবুব। ভুল-ত্রুটি মানুষের হয়, আমি দেশের বাড়িতে আছি। ফোনটি বিকল হয়ে গেছে। এসে আপনার সাথে বিস্তারিত কথা বলব। আল্লাহর দিকে দেখবেন, আর ভাইয়ের দিকে দেখবেন’।

এবিষয়ে কথা হয় ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড সচিব শহীদ আক্তার চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, জন্ম, মৃত্যু কিংবা জাতীয় সনদ পাওয়া নাগরিকের অধিকার। তবে যথাযথ কাগজপত্র, প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা এসব সনদ ইস্যু করে থাকি। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব পাওয়ার কথা নয়। আর ভোটার নিবন্ধন কোন প্রক্রিয়ায় করছে তারাই ভাল জানে’।
সরেজমিন ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিবন্ধন কাজে ব্যস্ত দুই শিক্ষক। এসময় চট্টগ্রামের বাইরে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হলেন এক নারী। তার কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছেন কাগজপত্র। কিছুক্ষণ পর প্রবেশ করেন চার যুবক। দুই শিক্ষক তাদের সাথে কথা বলছেন ইশারা-ইঙ্গিতে। কি যেন একটা লুকানোর চেষ্টা করছেন তারা। কথা প্রসঙ্গে আরিফ নামের এক যুবক নিজেকে সুলতানুল আরেফিন বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক দাবি করে বলেন, ‘স্যার স্কুলের কাজে ঢাকায় গেছেন। এতে ভোটার হালনাগাদ নিবন্ধন কার্যক্রমে সমস্যা হবে না দাবি করে আরিফ বলেন, তিনি এবং প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, নুর নাহার, ইমনসহ চারজন কাজ করছেন। আর তাদেরকে তদারকি করছেন একজন সুপারভাইজার।
ভোটার হালনাগাদ নিবন্ধন কার্যক্রমের সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল্লাহ তানভির। তিনি ইমারাতুন্নেছা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এবিষয়ে জানতে গতকাল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাস্টার মাহবুব, ইমন, আরিফ ও নুরনাহার মিলে প্রায় আড়াইশ ভোটার হালনাগাদ নিবন্ধন সম্পন্ন করে আমাকে দিয়েছে। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ সন্দেহজনক হওয়ায় সেগুলো ফেরত দিয়েছি’। নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা মেনেই সকল কার্যক্রম চলছে বলে দাবি করেন তানভির।

হালনাগাদ ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমে যুক্ত একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাইফুল কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি যথাযথ নিয়ম মেনেই তথ্য সংগ্রহ করছি। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, বাবা-মার ভোটার আইডি এবং নাগরিক সনদ ছাড়া কোনভাবেই ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই’।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, বায়েজিদ এলাকাটা পাহাড়ি। নি¤œআয়ের মানুষের বসবাস। পনের বিশ বছর আগে যেসব রোহিঙ্গা এদেশে এসেছে। এবার তাদের আত্মীয় স্বজনও আসছে। ওইসব পুরনো রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয় স্বজনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এদেশের কিছু মানুষ অর্থের লোভে জন্ম সনদ, ভোটার নিবন্ধনে নাম অন্তর্ভুক্ত করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব কাজ করে তারা আর্থিক লাভবান হলেও দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে ওই দুষ্টুচক্র।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট