চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নগরীর ৯ ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা ভোটার সংখ্যা বেশি

২০১৬ সাল থেকে রোহিঙ্গা ভোটারের প্রণবতা বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আটটি ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা ভোটারের সংখ্যা বেশি। পুরোনো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আশ্রয় নিয়ে ঢুকে পড়েছে ভোটার তালিকায়। এছাড়াও দালাল ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কৌশলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ২০১৬ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। নির্বাচন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

একাধিক সূত্র জানায়, নগরীর ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পুরোনো বসবাসকারীদের রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আসা রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বাকলিয়া বাস্তুহারা বস্তিতে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। পুরোনো রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে নতুন আসা রোহিঙ্গারা কৌশলে ভোটার হয়ে যায়। বাস্তুহারা বস্তির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রকাশ বার্মাইয়া জসিমের আশ্রয়ে ভোটার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জসিম গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, নগরীর ৩৬নং ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা ভোটার বেশি। শ্রমঘন এলাকা হওয়ায় বন্দর ও গার্মেন্টশ্রমিক সেজে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। নগরীর ঘনবসতি এলাকা হিসেবে পরিচিত বাকলিয়ার ১৭, ১৮ ও ১৯ নং ওয়ার্ডে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় ঢুকে যায়। পুরোনো রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে বৃহত্তর বাকলিয়ায় ক্রমান্বয়ে আসা রোহিঙ্গারা কৌশলে ঢুকে যায় ভোটার তালিকায়। ৬নং ওয়ার্ড ও ৯, ১০ এবং ১১ নং ওয়ার্ডেও রোহিঙ্গারা ঢুকে যায়। ৩৫নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডের বাস্তুহারা বস্তিতে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

একাধিক সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের নাগরিক বা জন্মসনদ নিয়ে ভোটার হয়ে যায় অনেক রোহিঙ্গা। আবার অনেকেই দালালের মাধ্যমে ভুয়া নাগরিক ও জন্মসনদ নিয়ে ভোটার হয়ে যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনেকে রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপার্ট বানিয়ে বিদেশেও পাড়ি দেয়। বর্তমানের নগরীর দুটি পাসপোর্ট অফিসে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট আবেদন জব্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, দালাল চক্রের নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার হয়। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আটক হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা তা স্বীকারোক্তিতেও তা উঠে এসেছে।

গত ১৮ আগস্ট লাকী নামে এক রোহিঙ্গা নারী জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য হাটহাজারী নির্বাচন অফিসে যান। ইসির কেন্দ্রীয় সার্ভারে লাকীর ভোটার হওয়ার তথ্য থাকলেও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যে লাকী নামে কোন এনআইডি ইস্যু করা হয়নি। এরপর থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদ প্রকাশ নুরু ডাকাতের স্মাটকার্ড উদ্ধারের পর টনক নড়েছে নির্বাচন কমিশনের। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের দুটি গ্রুপ ভুয়া ভোটার বা রোহিঙ্গা ভোটারের সঙ্গে জড়িত। পিয়ন থেকে শুরু করে কম্পিউটার সাপোর্ট এবং কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। দুদকের তদন্তেও অফিস সহকারী থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে এসেছে বলে দুদক সূত্র জানায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই কক্সবাজারে কাজ করেছেন নির্বাচন কমিশনের একটি টিম। এটিমের সদস্য একাধিক রোহিঙ্গা ভোটার ও এক দালালকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেয়। দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে বলে তথ্য দিয়েছে আটক করা কয়েকজন। কক্সবাজার নির্বাচন কমিশন সূত্র এই তথ্য জানা যায়।
নির্বাচন কমিশনের সুরক্ষিত সার্ভারে ঢুকে জালিয়াতির মাধ্যমে কিভাবে ভোটার হয়েছে, তার কূল-কিনার খুজে পাচ্ছে না ইসি একাধিক তদন্ত টিম। ইসি’র লাইসন্সেধারী (নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডধারী ল্যাটপট ও ইন্টারনেট মডেম) ল্যাপটপ ছাড়া ইসির কেন্দ্রীয় সুরক্ষিত সার্ভারে আপলোড করা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

এসব ঘটনার পর চলমান ভোটার তালিকা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। নতুন ভোটার হওয়ায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। নতুন ভোটারের জন্য ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নাগরিকত্ব সনদ, জেএসসি, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের সনদ (ক্ষেত্রবিশেষে), বাড়ি ভাড়ার রশিদ, জমির খতিয়ান, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদের ফটোকপি জমা দিতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনীর হোসাইন খান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বর্তমান হালনাগাদে কোন দিকে রোহিঙ্গা ভোটার ঢুকে যাচ্ছে তাই নিয়ে টেনশনে রয়েছি। প্রতিটি ফরম ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ এবিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরা সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট