চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চা বাগানে সমৃদ্ধ ফটিকছড়ি

গত ৮ মাসে উৎপাদন ৫৯ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮৬ কেজি চা পাতা

এস.এম মোরশেদ মুন্না, নাজিরহাট

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানের ১৭টির অবস্থান ফটিকছড়ি উপজেলাতে। ফলে চট্টগ্রামের মোট উৎপাদনের বেশিরভাগই আসে ফটিকছড়ি হতে। ২২টি চা বাগান হতে বছরে চা উৎপাদন হয় প্রায় ৮২ লক্ষ কেজি। যার মধ্যে ফটিকছড়ির ১৭টি চা বাগান হতে আসে ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯শত কেজি। ১৭টি চা বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ৩৫ হাজার শ্রমিকের। ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগানে ড্রাগন অয়েল গ্রিন টি, সিলভার নিডল হোয়াইট টি, গোল্ডেন আইব্রো অর্থোডক্স টি ও সিটিসি ব্ল্যাক টি নামের চার ধরনের চা উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে সিলভার নিডল হোয়াইট টি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা যায়।
সর্বোপরি চা বাগান মালিকরা মনে করছেন, পরিত্যক্ত সরকারি খাস জমিগুলি বাগানের আওতায় আনা গেলে এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ হতো।

চলতি বছরের (২০১৯) আগস্ট মাস পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলার ১৭টি চা বাগান হতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫৯ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮৬ কেজি চা। যা গতবছর (২০১৮)’তে ছিল ৫০ লক্ষ ৬২ হাজার ৮১৮ কেজি। চলতি বছরে বেশি হয়েছে ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার কেজি চা। ১৭টি চা বাগানের জানুয়ারি হতে আগস্ট মাস অর্থাৎ ৮ মাসের ২০১৮-২০১৯ সালের উৎপাদন পরিসংখ্যানে দেখা যায়- আন্ধারমানিক টি এস্টেটে চলতি ৮ মাসে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫২ হাজার ৯৪৯ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪০ হাজার ২০৮ কেজি। বারোমাসিয়া টি এস্টেটে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৫ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫শ কেজি। দাঁতমারা টি এস্টেটে ১৪ হাজার ১৮০ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ১৬ হাজার ৫০৫ কেজি। এলাহি নূর টি এস্টেটে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৬ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৫ কেজি। হালদা ভ্যালি টি এস্টেটে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮০ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৪২ কেজি। কর্ণফুলী টি এস্টেটে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭৫ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৮ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৫ কেজি। কইয়াছরা ডলু টি এস্টেটে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬২০ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ১৩৫ কেজি। মা জান টি এস্টেটে ৭৮ হাজার ৪৬৬ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৮৪ হাজার ৬৭৩ কেজি। মোহাম্মদনগর টি এস্টেটে ৩৩ হাজার ৬০৯ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ২৭ হাজার ২৪৭ কেজি। নাসিয়া টি এস্টেটে ৪৮ হাজার ৮১১ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪৮ হাজার ৯৩৫ কেজি। নেপচুন টি এস্টেটে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৬ লাখ ৪২ হাজার ১২৬ কেজি। নিউ দাঁতমারা টি এস্টেটে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৩৩ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ১৪৩ কেজি। উদালিয়া টি এস্টেটে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৭ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮শত কেজি। পঞ্চবটি টি এস্টেটে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮১ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫৬ কেজি। রামগড় টি এস্টেটে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৩ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০৮ কেজি। আছিয়া টি এস্টেটে ২ লাখ ১৭ হাজার ২৩৬ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ১৯৯ কেজি। রাঙ্গাপানি টি এস্টেটে ৪ লাখ ১৯ হাজার ২৮৯ কেজি, যা ২০১৮-তে ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৬১ কেজি। অর্থাৎ, প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে হালদা ভ্যালি টি এস্টেটে গিয়ে জানা যায়, ১ হাজার ৫২ একর পাহাড়ি ঢালু জায়গায় অবস্থিত হালদা ভ্যালি চা বাগান। বাগানে চার ধরনের চা উৎপাদন হয়। ড্রাগন অয়েল গ্রিন টি, সিলভার নিডল হোয়াইট টি, গোল্ডেন আইব্রো অর্থোডক্স টি ও সিটিসি ব্ল্যাক টি। চলতি বছর বাগানে ১০ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বাগানে কাজ করছে ১ হাজার ৫২ জন শ্রমিক। চায়ের পাশাপাশি রয়েছে ড্রাগন ফল বাগানও। বাগানটি হেক্টরপ্রতি উৎপাদনে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারে ভূষিত হয়।

হালদা ভ্যালি টি এস্টেটের সিনিয়র ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভূমি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চা বাগানগুলো পরিচালিত হয়। ভারত থেকে চোরাইপথে রামগড় ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চা পাতা আসায় দেশে উৎপাদিত চায়ের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। হালদা ভ্যালি টি এস্টেটের চা পাতা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে হালদা ও রামগড় চা বাগানের মালিক পেডরোলো গ্রুপের কর্ণধার নাদের খান জানান, চট্টগ্রামের মোট ২২টি চা বাগানের মধ্যে ১৭টি ফটিকছড়িতে অবস্থিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে চা’য়ের চাহিদা বেড়ে গেছে।
আমরা চা বাগানের জন্য অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছি। বিনিযোগকৃত টাকা ফেরত আনতে হলে আরো বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। যত বিনিয়োগ হবে চা শিল্পের প্রসার হবে, প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরিত্যক্ত সরকারি খাস জমিগুলি বাগানের আওতায় আনা গেলে এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ হবে। তিনি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চা উৎপাদন করছেন বলে জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট