চট্টগ্রাম থেকে বেড়ানোর কথা বলে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় স্ত্রীকে এনে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ জঙ্গলে গুম করে স্বামী আব্দুল কাদের (৪২)। হত্যার পর লাশ গুমের প্রায় তিন মাস পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিযেছেন ঘাতক স্বামী।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জেলার পানছড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে আব্দুল কাদের স্ত্রীর হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ১ আগস্ট মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংরাকাপা নামক দুর্গম এলাকার পাহাড়ের লোংগা থেকে উদ্ধার হওয়া কংকালের সূত্র ধরে লাশের পরিচয শনাক্তের পর খুনিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পুলিশ এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করলো।
পুলিশ জানায়, গত ১ আগস্ট বেলছড়ির চোংরাকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মাটিরাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন।
মামলার আইও মাটিরাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাহানুর আলম উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল উপজেলার গোমতির বান্দরছড়ার মরহুম আবু খাঁ’র ছেলে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মাইনুর বেগমের বলে শনাক্ত করেন। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরই শুরু হয় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও খুনি গ্রেপ্তারে জোর পুলিশি তৎপরতা। পলাতক স্বামী আব্দুল কাদেরকে ধরতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, ইপিজেড ও খাগড়াছড়ির সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ।
অবশেষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে পানছড়ি বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুল কাদেরকে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন মো. আব্দুল কাদের। পরে শুক্রবার খাগড়াছড়ির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আব্দুল কাদের।
জানা যায়, লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের মোস্তফা সর্দারের মেয়ে মাইনুর বেগম (২৩) চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টে চাকরী করতো। গার্মেন্টে চাকরীর সুবাদে প্রথমে পরিচয়, অতপর প্রেম ও পরে বিয়ে হয় মো. আব্দুল কাদেরের সাথে। বিয়ের পর থেকেই চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। গত রমজানের ঈদ উপলক্ষে ৮ জুন স্ত্রী মাইনুর বেগমকে নিয়ে গোমতির বান্দরছড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে আব্দুল কাদের।
দুদিন পর ১০ জুন সকাল ১১টার দিকে পাহাড় দেখানোর কথা বলে স্ত্রী মাইনুরকে দুর্গম চোংরাকাপা নামক স্থানে নিয়ে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ঘাতক স্বামী। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্য আব্দুল কাদের স্ত্রীর মরদেহ চোংরাকাপার গভীর জঙ্গলে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায়।
পূর্বকোণ/নিজাম/আফছার