চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ সকাল এগারোটার মধ্যে বৈধ সংযোগ চালুর আশ্বাস

উচ্ছেদ ঠেকাতে সড়ক অবরোধ

লালখানবাজারে মাসুম-মণির নেতৃত্বে আড়াইঘণ্টা অবস্থান বৈশাখের তপ্তরাধে সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ মে, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ঠেকাতে প্রায় আড়াইঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে আওয়ামীলীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ও বিএনপি নেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি। তাদের দাবি, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে হবে। তাদের সাথে পাহাড়ের ঢালুতে অবৈধভাবে বসবাসকারী নারী পুরুষ অংশ নেয়। মাসুম লালখান বাজার ওয়ার্ড আাওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেত্রী মণি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এ সময় তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ নাছির উদ্দিনের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করে। বিচ্ছিন্ন করা বিদ্যুৎসংযোগ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থাপন না করলে ফের সড়ক অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছেন বিএনপি ও আওয়ামীলীগের এ দুই নেতা।
গতকাল (রবিবার) বেলা দেড়টা থেকে পৌনে চারটা পর্যন্ত নগরীর লালখান বাজার ইস্পাহানি মোড়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অবরোধ করে রাখায় নগরীর অধিকাংশ সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে বৈশাখের তপ্তরোধে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। নগরীতে পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে সেখানকার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ আগামী ১৫ মে’র মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। গত শনিবার সকালে খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণা বাটালি হিলে অভিযানে যায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীন পাঁচটি ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনররা। মতিঝর্ণা, পোড়াকলোনি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্রান্সফরমার জব্দ করতে চাইলে মাসুম ও মণির আপত্তিতে সেগুলো রেখে আসতে হয়েছিলো। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল (রবিবার) সড়ক অবরোধ করে তারা।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অবৈধ বসবাসকারী নারী পুরুষ নিয়ে নগরীর লাইফলাইন ইস্পাহানী মোড়ে দুই লেনের সড়ক অবরোধ করে তারা। হঠাৎ করে সড়ক অবরোধ হওয়ায় পুরো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়। অবরোধের কারণে আশেপাশের এলাকা ছাড়িয়ে একপর্যায়ে দামপাড়া, আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি, লাভলেন, জামালখান, চকবাজার, টাইগারপাস মোড়, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়সহ পুরো এলাকায় যানজট লেগে যায়। এতে সাধারণ মানুষকে বৈশাখের তীব্র গরমে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দিদারুল আলম মাসুম ও মনোয়ারা বেগম মণিকে অনুরোধ করে সড়কের একপাশ থেকে লোকজন সরিয়ে নেন। তাঁরা ইস্পাহানি মোড়ের গোলচত্বরে সড়কবিভাজকের ওপর দাঁড়িয়ে সমাবেশ করেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সমাবেশ শেষ করে মাসুম ও মণি বিক্ষুদ্ধ নারী পুরুষদের নিয়ে আবারও লালখান বাজারে চলে যান। এর আগে পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের দাবির কথা শোনেন এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।
সমাবেশে দিদারুল আলম মাসুম ঘোষণা দেন, সোমবার (আজ) সকাল ১১টার মধ্যে লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় বিচ্ছিন্ন করা সংযোগ পুনরায় চালু করতে হবে। অন্যথায় ১১টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ চলবে। সড়ক অবরোধের সময় উপস্থিত লোকজনকে মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দীনের নামে স্লোগান দিতে শোনা গেছে। জানতে চাইলে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুর আলম মাসুম বলেন, ‘ঝুঁকির কথা বলে একটা পুরো এলাকার বৈধ-অবৈধ সব বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গেছে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট। এমনকি তারা ট্রান্সফরমার নিয়ে যেতে চাইলে আমরা সেটা আটকাই। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমাদের কোন কথা নেই। বৈধগুলো কেন কাটা হলো। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে আমি আবারো রাস্তায় নামবো। সরকারি দলের নেতা হয়ে বিএনপি নেত্রীকে নিয়ে সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে মাসুম বলেন, বিক্ষুদ্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না হয় সেজন্য আমি গিয়েছি। মনোয়ারা বেগম মণি বিএনপির নেত্রী হলেও তিনি কাউন্সিলর। এছাড়া তিনি মহিলা হওয়ায় তাকে আমি ডিস্টার্ব করি না।
নগর মহিলা দলের সভাপতি কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মণি বলেন, শনিবার বিদ্যুতের লাইনগুলো কেটে দেওয়ার পর থেকে মতিঝর্ণার লোকজন রাস্তায় আছে। এ গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ ছাড়া তারা বাসায় থাকতে পারছে না। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নগর পুলিশের উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেয়র মহেয়াদয় ও পিডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা কাল (সোমবার) সকাল এগারোটার মধ্যে বৈধ সংযোগগুলো চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি অবরোধকারীদের জানিয়েছি। এতে তারা সড়ক ছেড়ে চলে গেছে।
নগরীর লালখান বাজার, জামালখান ও এনায়েত বাজার ওয়ার্ড মিলে সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত মনোয়ারা বেগম বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়। ২০০৮ সালে আওয়ামলীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির ডাকা বিভিন্ন হরতাল ও অবরোধে একাধিকবার জেলেও গিয়েছিলেন মণি। আর সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিদারুল আলম মাসুম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট