চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মামলা প্রত্যাহার করবে যুবদলের দু’ গ্রুপ

বিরোধ থামাতে উদ্যোগ বিএনপির

মোহাম্মদ আলী

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৫২ পূর্বাহ্ণ

দুই গ্রুপের বিরোধ, পাল্টাপাল্টি কমিটি, সংঘর্ষ, মামলা ও পাল্টা মামলার মধ্যে মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। গত পহেলা সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলাও হয়েছে দুটি। এ নিয়ে যুবদলের এক নেতা গ্রেপ্তারও হন। মহানগর যুবদল কমিটির সাথে পদবঞ্চিতদের দীর্ঘদিন ধরে এ বিরোধ চলে আসছে। এ অবস্থায় বিরোধ থামাতে মুরব্বি সংগঠন মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর দুই গ্রুপকে নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠকও করেন। ওই বৈঠকে বিবদমান দুই গ্রুপের দায়েরকৃত দুটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের পহেলা জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি ও মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। এ কমিটিতে মো. ইকবাল হোসেনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মোশাররফ হোসেনকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমদাদুল হক বাদশাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
এ কমিটি ঘোষণার পর যুবদলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ গ্রুপের অন্যতম ছিলেন, নগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি সামসুল হক ও মোহাম্মদ মহসিন। পদবঞ্চিত হয়ে তাদের গ্রুপের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও ঘোষণা করেছিল। গ্রুপের ক্ষুব্ধ সদস্যদের অভিযোগ ছিল, ঘোষিত কমিটিতে নিষ্ক্রিয়দের আধিপত্য বেশি ছিল। আন্দোলন-সংগ্রামে তারা মাঠে ছিলেন না। ফলে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নগর যুবদলের কার্যক্রম চলে আসছিল। এরমধ্যে যুবদল কমিটি নগরীর ৫টি থানা ও ১৫ ওয়ার্ডে যুবদলের কমিটি গঠন করে। অপরদিকে পদবঞ্চিত গ্রুপটিও নগরীর ৪টি থানা ও ৬টি ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। সর্বশেষ গত পহেলা সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সংঘর্ষে জড়ায় যুবদলের দুই গ্রুপ। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মহানগর যুবদলের প্রচার সম্পাদক জিল্লুর রহমান জুয়েল। এ ঘটনায় বাদি হয়ে তিনি কোতোয়ালী থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, সামসুল হক, তানভীর আহমেদ, এম আর খান ফারুক, মোহাম্মদ ইসমাইল ও তৈয়ব আলী। থানা পুলিশ তৈয়ব আলীকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সামসুল হক অনুসারীর যুবদল সদস্য আবুল কালাম বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় আরো একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় ৭ জনকে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, জিল্লুর রহমান জুয়েল প্রমুখ।

এদিকে যুবদলের গ্রুপিং নিরসন প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘যুবদলের দুই গ্রুপের বিরোধ মীমাংসা করতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও আমি একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। তারই আলোকে গত ১০ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, সাবেক সহ-সভাপতি সামসুল হক ও মোহাম্মদ মহসিনকে নিয়ে একটি বৈঠক করি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুই গ্রুপ সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের মামলা প্রত্যাহার করবে’।

তবে যুবদলের চলমান দুই গ্রুপের বিরোধ মানতে নারাজ মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘মহানগর যুবদলের কমিটিতে কোন ধরনের গ্রুপিং নেই। সামসুল হকের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। তিনি যুবদলের কেউ নন, মহানগর বিএনপির সদস্য’। মোশাররফ হোসেন দীপ্তি এমনকি যুবদলের বিরোধ নিরসনে কোন ধরনের বৈঠকও হয়নি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে অন্য প্রসঙ্গে ডেকে নিয়ে গেছেন। সেখানে সামসুল হক ও মোহাম্মদ মহসিন ছাড়াও আরো অনেকে ছিলেন’।
বিরোধ যদি না থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুবদলের এক সদস্যের মামলা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ‘এটা যুবদলের বিরোধের জন্য নয়, আমাদের সাংগঠনিক কর্মকা-ে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপির এক সদস্য এ মামলা দায়ের করেছে’।

জানতে চাইলে মহানগর যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি সামসুল হক বলেন, ‘মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের ডেকে বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং দায়েরকৃত দুটি মামলা সমঝোতার ভিত্তিতে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন’।
সামসুল হক বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করলে এ বিরোধের সৃষ্টি হয়। মূলত পদবঞ্চিতরা এরপর থেকে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে’।

সামসুল হক যুবদলের কেউ না মোশাররফ হোসেন দীপ্তির এমন উত্তরে তিনি বলেন, ‘কমিটিতে থাকলেই যদি যুবদল হয়, তাহলে যুবদলের কমিটিতে যারা রয়েছেন তারাই শুধু যুবদল করেন। অন্যরা যুবদল করতে পারবে না? তাহলে ব্যাপারটা এমনই দাঁড়ায় যে, মহানগর বিএনপির কমিটির বাইরে যারা রয়েছেন তারা কেউই বিএনপি করে না। এ ধরণের অবান্তর বক্তব্য দিয়ে নেতৃত্ব চলে না। নেতৃত্ব দিতে গেলে বাস্তবতার নিরিখে বক্তব্য দিতে হয়’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট