চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইসির নজর এবার চট্টগ্রামে

রোহিঙ্গা ভোটার মাঠে কাজ করছে দুটি টিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক রোহিঙ্গা মহিলা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিতে এসে ধরা পড়েন। এই ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের ভোটার নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

রোহিঙ্গা ভোটার নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের একটি টিম কক্সবাজারে কাজ করছেন। আগামীকাল রবিবার সেই টিম চট্টগ্রাম আসার কথা রয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চিহ্নিত ৪৬ রোহিঙ্গা ভোটার ছাড়াও কক্সবাজারেও অনেক রোহিঙ্গা দালাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইসির ঢাকার টিম কক্সবাজার থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা ও এক দালালকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেছে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও থানা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ভোটার আটক করা হলেও কার মাধ্যমে কিভাবে ভোটার হয়েছে, সেই তথ্য মিলছে না। তবে কয়েকজন রোহিঙ্গা দাবি করেছে, চট্টগ্রামে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সেই দাবির সঙ্গে চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার অনেক তথ্য খুঁজে পেয়েছে ইসি।
তবে নির্বাচন কমিশনের সুরক্ষিত সার্ভারে ঢুকে জালিয়াতির মাধ্যমে কিভাবে ভোটার হয়েছে, তার কূল-কিনার খুঁজে পাচ্ছে না ইসি একাধিক তদন্ত টিম। ইসি’র লাইসন্সেধারী (নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডধারী ল্যাটপট ও ইন্টারনেট মডেম) ল্যাপটপ ছাড়া ইসির কেন্দ্রীয় সুরক্ষিত সার্ভারে আপলোড করা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ভুয়া এনআইডি তৈরিতে সর্ষে ভূত রয়েছে বলে জানান অনেক কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনীর হোসাইন খান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘কক্সবাজারে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় ঢুকেছে। এসব যাচাই-বাছাই করছেন। কয়েকজন আটক করেছে, আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে কিভাবে ঢুকে যাচ্ছে তা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
গত ১৮ আগস্ট লাকী নামে এক রোহিঙ্গা নারী জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য হাটহাজারী নির্বাচন অফিসে যান। আইডি কার্ড নিয়ে সন্দেহ হলে পরদিন জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আনা হয়। ইসির কেন্দ্রীয় সার্ভারে লাকীর ভোটারের তথ্য থাকলেও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যে লাকী নামে কোন এনআইডি ইস্যু করা হয়নি। এভাবে ভুয়া এনআইডি তৈরির জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পায়।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি এই জালিয়াতির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ঢাকা থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ করে ঢাকায় ফিরেছেন। সেই দলটিও জালিয়ার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তবে ঢাকার তদন্ত টিমটি আবার তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম আসছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে কাজ করা টিমও চট্টগ্রামে আসছেন। রোহিঙ্গা ভোটার নিয়ে চট্টগ্রামের প্রতি নজর ইসির।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘বর্তমান হালনাগাদে কোন দিকে রোহিঙ্গা ভোটার ঢুকে যাচ্ছে তাই নিয়ে টেনশনে রয়েছি। প্রতিটি ফরম ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ এবিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরা সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।
রহস্যে ঘেরা গায়েব হওয়া এক ল্যাপটপ ও এক টেকনিকেল সাপোর্ট : জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিক ভোটার হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও ভোটার তালিকা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদ প্রকাশ নুরু ডাকাতের ভোটার হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কিভাবে করা হচ্ছে এখনো তার কূল-কিনারা করতে পারছে ইসি।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইসি’র সুরক্ষিত সার্ভারে কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বা ভোটার তালিকা হালনাগাদে নিয়োজিত সাপোর্ট ছাড়াও কোন তথ্য আপলোড করা সম্ভব নয়। কারণ ইসি’র লাইসেন্সধারী ল্যাপটপ ব্যবহার করেই আপলোড করতে হয়। অন্য কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে আপলোড করা যাবে না। ২০১৪ সালে মিরসরাই উপজেলা থেকে গায়েব হওয়া একটি ল্যাপটপ ও এক টেকনিকেল সাপোর্টকে ঘিরে রহস্যের দানা বেঁধেছে। মোস্তাফা ফারুক নামে এক টেকনিকেল সাপোর্ট জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে মিরসরাই নির্বাচন কার্যালয়ে নিয়ে যান। ইসির লাইসেন্সধারী ওই ল্যাপটপ ঘায়েব হয়ে যায়। যা এখনো খুঁজে পায়নি নির্বাচন কমিশন।
জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ঘটনা প্রকাশ পেলেও দায়সারা পদক্ষেপ ছিল নির্বাচন কমিশনের। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জালিয়াতির ঘটনা বেড়েই চলেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট