চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ওদের হাতেই স্বপ্নের বাংলাদেশ পাঁচ তরুণের মানবিক উদ্যোগ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন বিদ্যালয় যাতায়াত করার সময় রাস্তায় অনেক অসহায় মানুষ দেখতাম। তাদের দেখে মনে মনে খুব কষ্ট পেতাম। সবসময়ই তাদের নিয়ে ভাবতাম যদি তাদের জন্য কিছু করতে পারতাম। এই ভাবনা থেকেই আমার পথ চলা। একদিন এ বিষয়ে আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। যদি আমরা এই অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে কেমন হয়। বন্ধুদের মধ্যে পাঁচজন একমত পোষণ করেন। সমাজের অসহায়-দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতে ২০১০ সালে এই পথচলা শুরু। বর্তমানে আমাদের সদস্য সংখ্যা ৪০ জন।

দৈনিক পূর্বকোণের সাথে আলাপে নওশাদ বিন ইব্রাহীম তাদের সামাজিক কর্মকা-ের এই বর্ণনা দেন। তিনি কমার্স কলেজ থেকে বর্তমানে মাস্টার্স শেষ করেছেন। কিন্তু এখনো চাকরি জীবনে পা দেননি। তিনি বলেন, অনেক রিকশাচালক ভাড়ায় রিকশা চালান। আয়ের অর্ধেক রিকশ্রা মালিককে দিয়ে দিতে হয়। তাই তাদের আয় দিয়ে সংসারের ব্যয়ভার বহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই রিকশাচালকদের যদি নিজের একটি রিকশ্ াথাকে তবে আর কাউকে টাকা দিতে হবে না। পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানদের শিক্ষাদানে বেগ পেতে হবে না। অনেক নারী আছে যারা রাস্তায় ভিক্ষা করেন কিন্তু সুস্থ ও সক্ষম। তাদেরকে টাকা দিয়ে নানাভাবে সাহায্য করা হয়। যাতে তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেন। মূলত এ ধরনের মানুষগুলোকেই আমরা আগে খুঁজে বের করি। তারপর আমাদের একটি টিম প্রথমে তাদের সাথে কথা বলে। তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করে। এই যেমন বাড়ি কোথায়, থাকে কোথায়, পরিবারে কে আছে, ভিক্ষা কেন করছে ইত্যাদি। যদি তাকে কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিই

তাহলে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়বে কিনা। এসব বিষয়ে যদি তারা রাজি হয় তবেই আমরা তাকে সাহায্য করি।

নওশাদ বিন ইব্রাহীম আরো জানান, এই পথচলায় আমাদের কেউ টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি। আমরা পড়াশোনার ফাঁকে নিজেদের টিউশনের টাকা জমিয়ে মানুষকে সাহায্য করেছি। ক্রমে দলে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর সাহায্যের পরিমাণও বাড়ে। এই অর্থ দিয়ে কখনো পথশিশুদের খাবার বিতরণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা, এতিমখানার শিশুদের খাবার প্রদান, দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, অভাবগ্রস্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যবস্থা ও রোগীদের রক্ত দান । তিনি বলেন, দলে সদস্য বাড়ার পর আমরা একটি ক্লাব গঠন করি। ক্লাবের নামকরণ করা হয় ‘ফ্রেন্ডস এন্ড কোম্পানি’। এই নামটি মূলত একটি নাটক থেকে নেয়া। ক্লাবের সবাই নগরীর বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কারো পড়া-লেখা শেষ, আবার কেউ এখনো পড়াশোনার মধ্যে আছে। সবাই টিউশন করি। আর সেই টাকা থেকেই প্রত্যেকে সপ্তাহে ২ শ টাকা করে জমা দেই। মাস শেষে সেই টাকা দিয়েই কিছু মানুষকে সাহায্য। এই পর্যন্ত আমরা সাতজনকে রিকশ্,া পাঁচজনকে ভ্যানগাড়ি ও নয় জন নারীকে সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছে। মোগলটুলি এলাকার বস্তির দু’ জন মেয়ের বিয়েতে আমরা ৫০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। আর এ টাকাগুলো একান্ত আমাদের নিজেদের জমানো। আবার আড়াই’শ জন পথশিশুকে সপ্তাহে তিনদিন সি আর বি ডিসি হিলে পড়াশোনা করাই। তবে এখন আমাদেরকে আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন ব্যবসায়ী এই সমাজসেবামূলক কাজের জন্য আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন। তাই এখন আমরা আগের চেয়ে আরো বেশি মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ পাচ্ছি।

কথা হয় ফ্রেন্ডস ক্লাবের সদস্য রায়হান, নজিব, ইঞ্জিনিয়ার সুমনের সাথে। তারা বলেন, লক্ষ্য আমাদের একটি। নিজের সাধ্যের মধ্যে গরীব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। আর এই কাজগুলো করে খুব শান্তিও পাই। এটাই আমাদের জন্য অনেক। এই যে রাস্তার শিশুগুলো ঠিকমত না পায় খেতে, না পায় পড়তে। তাই সপ্তাহে একটিদিন যদি তাদের জন্য কিছু করতে পারি নিজেরই খুব ভালো লাগে। একাতো আর কোন কাজ করা যায় না। কাজ যত বড়ই হোক না কেন, যদি দশজনে মিলে করি তবে সে কাজ অতি সহজ হয়ে যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট