চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জেলেই তাদের পরিচয় এক সঙ্গেই ডাকাতি

নিজস্ব সংবাদদাতা , রাঙ্গুনিয়া

৬ মে, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

তাদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় হলেও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা চট্টগ্রাম জেলখানায় ছিলো। সেখানেই তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জেলখানায় বসে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, জামিনে বের হয়ে তাদের যে কারো উদ্যোগে ডাকাতির কোন ঘটনা করার পরিকল্পনা করলে একে অপরকে ডাকবে। সেভাবেই তারা বছর খানেক ধরে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায় ডাকাতি করে আসছিল। তাদের মাঝে একজন ছিল নোয়াখালীর। সে জেল থেকে জামিনে বের হবার পর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের একটি ইটভাটায় শ্রমিকবেশে কাজ নেয়।

কয়েক মাস ধরে দিনের বেলায় ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও রাতের বেলার চলাফেরায় স্থানীয় কয়েকজন অপরাধীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ইটভাটা শ্রমিকের আড়ালে সে টার্গেট করে ইসলামপুর এলাকার আবদুস সাত্তারের বাড়ি ডাকাতির। ‘মি’ আদ্যাক্ষরের এই ডাকাতকে পুলিশ এখনো ধরতে পারেনি। তার আয়োজনেই মূলত গত ৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস সাত্তারের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ডাকাতির সাথে জড়িত ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ডাকাতির সাথে জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১০ সদস্যের পরিচয় হয় চট্টগ্রাম কারাগারেই। ইটভাটা শ্রমিকবেশি ডাকাত সর্দার ‘মি’ অন্যান্য ডাকাতদের নিয়ে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বাড়িটি রেকি করে বলে ধৃত ডাকাতরা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তার করা ডাকাতরা হচ্ছে, পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কেশবপুর ইউনিয়নের নুরুল আলম বাড়ির সিরাজ মিয়ার পুত্র মো. মিজান (৩৫)। সে চন্দ্রঘোনার কদমতলী ইউনিয়নের বনগ্রামে থাকতো। বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের হাছি মিয়ার পুত্র মো. আজাদ ওরফে জসিম (৩৩), সে বর্তমানে বায়েজিদ থানার বালুছড়া সোলেমানের কলোনি এলাকায় থাকতো। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক এলাকার জেলেপাড়ার দুলাল মহাজন বাড়ির সাধন দে’র পুত্র সুব্রত দে ওরফে সুমন (২৬)। চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের বনগ্রাম আজিজনগর এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র আবদুল মতিন (২৫)। এর আগে শুক্রবার বিকালে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ইসলামপুরে ডাকাতির ঘটনার অন্যতম সদস্য এবং ১০ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. সেলিম ওরফে বাইট্টা সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডাকাত দলের এই ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. ইসমাঈল। তাদেরকে গতকাল (রোববার) সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘আসামিরা পেশাদার ডাকাত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ এপ্রিল ইসলামপুর ইউনিয়নে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে তারা। ঘটনার সাথে আরো অনেকেই জড়িত থাকার কথা জানায় তারা। গ্রেপ্তারদের মধ্যে মিজানের বিরুদ্ধে গতবছরে রাঙ্গুনিয়ার শান্তি নিকেতনে ডাকাতি করতে গিয়ে বাজারের দারোয়ানকে খুনসহ ডাকাতি মামলা ও হাটহাজারী এবং রাঙ্গুনিয়া থানায় পৃথক দুটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। ডাকাত আজাদ ওরফে জসিম ২০১৪ সালে ডাকাত বাইট্টা সেলিমের সাথে ইছাখালী এলাকায় ডাকাতি করতে গেলে তাদের চিনে ফেলায় সিএনজি চালিত ট্যাক্সি চালককে গুলি করে হত্যা করেছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অস্ত্র মামলা রয়েছে। মতিন গত বছর রাঙ্গুনিয়া থানায় মদসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তার সুমন পেশায় একজন সিএনজি ট্যাক্সিচালক হলেও সে ডাকাত দলের নতুন সদস্য। গতকাল (রোববার) দুপুরে ডাকাতির ঘটনার আদ্যোপান্ত স্বীকার করে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে চার ডাকাত’।
রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মুঠোফোন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ‘কারাগারে থাকাকালীন তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। ডাকাতির প্রস্তুতির আগে প্রত্যেকে প্রত্যেকের এলাকায় যোগাযোগ করে সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি করতে যায়। রোজার আগে আরো ডাকাতির প্র¯ুÍতি নিয়েছিল তারা। আসামিরা এর আগে প্রত্যেকে কারাগারে ছিল। কারাগারে বসে তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। এই দলে আরো অনেকে রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়। তাদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট