এক সড়কেই পাল্টে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের দৃশ্যপট। বিলীন হয়ে যাওয়া গাজী হালদা নামের এ সড়কটি উদ্ধার করে পুনর্নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গত বছরের মে মাসে সড়কটি উদ্বোধনের পর পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পুরো এলাকাজুড়ে। যোগযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পুরো এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা, বাড়ছে কর্মস্থান।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উত্তর হালিশহর গলিচিপা পাড়া থেকে সৈকত পর্যন্ত এ সড়কটি স্থানীয়দের কিছু ব্যক্তির দখলে পড়ে সংকীর্ণ হতে শুরু করে। একপর্যায়ে সিজিপিওয়াই-ফৌজদারহাট রেল সড়ক থেকে সৈকত পর্যন্ত পুরো সড়কটি বিলীন হয়ে যায়। টোল রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণের পর গত কয়েক বছরে উপকূলজুড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও সড়কটি বেদখল থাকায় উত্তর হালিশহরের ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে গত বছর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় সড়কটি পুনরুদ্ধার করে চসিক। এরপর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০০ ফুট দীর্ঘ ও ২৮ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটি সংস্কার করা হয়।
সড়কটি চালু হওয়ার পর গত প্রায় ৮-৯ মাসে পুরো এলাকার দৃশ্য যেন পাল্টে গেছে। এলাকার ফুল চৌধুরী পাড়া, গলিচিপা পাড়া, জমাদার বাড়ি, রাজা মিয়া ড্রাইভারের বাড়ি, নওজেস খান চৌধুরী বাড়ি, ডা. ইদ্রিসের বাড়ি, রাজা মিয়া চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দাসহ উত্তর হালিশহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। পুরো এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন স্থাপনা, সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। বেড়েছে জমির দাম, পাল্টে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন সড়কের দু’পাশসহ আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবাদি পশুর খামারসহ নতুন সড়কের পাশে গড়ে উঠছে স্থানীয় ক্রীড়ামোদীদের জন্য টার্ফকোর্ট।
স্থানীয় গলিচিপা এলাকার বাসিন্দা এমরান বলেন, উপকূলে টোল রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়কের কারণে বিচ্ছিন্ন ছিল এই এলাকা। উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়া লাগেনি। কিন্তু হালদা গাজী সড়ক নির্মাণের পর পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। এখানকার বাসিন্দাদের বন্দর পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় যোগাযোগ সহজ হয়েছে। বেড়েছে জমির দাম। একসময়ের পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে উঠছে স্থাপনা।
ফুলছড়ি পাড়ার বাসিন্দা শহীদুল আলম সুমন বলেন, গাজী হালদা সড়ক নির্মাণের পর শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়নি। এলাকার সামাজিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন এসেছে। সন্ধ্যার পর এই এলাকায় সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারতো না। রেললাইন ঘিরে ছিল মাদকের আড্ডা। নতুন সড়ক নির্মাণের পর থেকে নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে। আলোকিত হয়ে গেছে অন্ধাকারাচ্ছন্ন এই এলাকা। এখন রাতের বেলাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে মানুষ।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর লায়ন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, উত্তর হালিশহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এসড়কটি উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সড়কটি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছি। অবশেষে মেয়রের সহযোগিতায় দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি এ সড়ককে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন কর্মযজ্ঞ। দুই বছর আগেও অন্ধাকারচ্ছন্ন ছিল এই এলাকা। এখন বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠছে। এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।
পূর্বকোণ/জেইউ