ওয়াসা সহকারী পাম্প চালক মো. ইমতিয়াজ হাসানকে মারধরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজে বিঘ্ন ঘটাতে তৎপর হয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। ইতোমধ্যে চক্রটি নানা ইস্যু তুলে আন্দোলনে নেমেছে, ঘোষণা করেছে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিও। এ নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টায় ওয়াসা ভবনে সহকারী পাম্প চালক মো. ইমতিয়াজ হাসানকে মারধর করেন একই সংস্থার কর্মচারী মো. জাকারিয়া, রুহুল আমিন, এসকান্দর মিয়া ও রেজোয়ান হোসেন দুলাল। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কর্মচারী ইমতিয়াজ হাসান এদের নাম উল্লেখ করে গত ৩০ নভেম্বর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে তিনি ওয়াসায় কর্মরত রয়েছেন। চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওয়াসার সহকারী পাম্প চালক মো. জাকারিয়া তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে চাকরি স্থায়ী করতে না পারার নানা অজুহাত দিতে থাকলে মো. জাকারিয়াকে তার টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্ত মো. জাকারিয়া নানা তালবাহানা দিয়ে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তার সাথে জাকারিয়ার মনোমালিন্য চলতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে তিনি ওয়াসা ভবনের জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় তার একাউন্টে এক লাখ টাকা জমা দিতে গেলে সেখানে জাকারিয়া, রুহুল আমিন, এসকান্দর মিয়া ও রেজোয়ান হোসেন দুলালের সাথে দেখা হয়। এ সময় আমি জাকারিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তিনিসহ অন্য চারজন উত্তেজিত হয়ে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তাতে তিনি প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে মো. জাকারিয়া, রুহুল আমিন, এসকান্দর মিয়া ও রেজোয়ান হোসেন দুলালসহ আরো কয়েকজন মিলে তাকে চর থাপ্পড়, কিল, ঘুষি, মারতে থাকে এবং তার কাছে থাকা এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। তার শোর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাকে হুমকি প্রদান করেন এবং কি করে তিনি ওয়াসাতে চাকরি করে তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম ওয়াসা গত ২৬ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) মো. লাল হোসেনকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (টিএন্ডপি) ও উপ প্রধান (উন্নয়ন) মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ওয়াসার গঠিত এ তদন্ত কমিটি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকাল ১১টায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে একটি সভা আহ্বান করে। কিন্তু গত ৩১ জানুয়ারি এ সভার দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকে তৎপর হয়ে ওঠেছে এ ঘটনার অপরাধী চক্রটি। তারা তদন্ত কাজ ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে একই সময়ে আন্দোলনের নামে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। পরে এ সভা একদিন পিছিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি করা হয়।
অভিযোগ ওঠেছে, তদন্ত কমিটিকে চাপের মুখে ফেলতে ওয়াসার সংঘবদ্ধ চক্রটি নানাভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি অভিযোগকারী যাতে কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারেন সেজন্য শোডাউন দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
এদিকে আউট সোর্সিংয়ে লোক নিয়োগে বাণিজ্য, সহকর্মীদের উপর হামলা, জায়গা দখল, ঠিকাদারি বাণিজ্য, সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, বদলি বাণিজ্য, ওয়াসার ঘর বরাদ্দ নিয়ে অন্যজনকে ভাড়া প্রদান ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংঘবদ্ধ চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পূর্বকোণ/পিআর