চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

হালিশহরের লাকি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন

স্ত্রীকে হত্যার পর তাঁর কবরও জিয়ারত করেন খালেদ নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

চোখের সামনে থেকে খাবার নিয়ে ফেলে দিয়ে গালিগালাজ করায় রাগের বশে স্ত্রী লাকী আক্তারকে হত্যা করেছিলেন খালেদ নুর। ঘটনার পর পর পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে গিয়ে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করে আসেন নুর।
চলতি বছরের ১৯ মার্চ হালিশহর কে-ব্লকের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদামঘরে লাকীকে (৩২) হত্যা করা হয়। ঘটনার একমাসের মাথায় কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে নুরকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাকেই একমাত্র আসামি করে সম্প্রতি লাকী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই। লাকী বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের মৃত হারুন হাওলাদারের মেয়ে। নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকার কে ব্লকে তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, খালেদ নুর কক্সবাজার জেলার উখিয়ার পূর্ব মরিচ্যা গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে। তার বয়স যখন চার বছর তখন মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান বাবা। অন্য একজনকে বিয়ে করে মা সৌদি আরব চলে গেলে চরম দরিদ্রতার মাঝে নানার বাড়িতে বেড়ে ওঠেন নুর। কক্সবাজার সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে আর্থিক সংকটের কারণে ভর্তি হতে পারেননি। নগরীতে এসে দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠে একটি গার্মেন্টসে চাকুরি নেন খালেদ নুর। পাশাপাশি একটি ক্রোকারিজের দোকানেও কাজ নেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজে অনার্সে ভর্তি হন।

একবছর পর (২০১২ সালে) একটি প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির প্রতিষ্ঠানে সেলসম্যানের চাকুরি নেন। কর্মস্থল ছিলো ইপিজেড এলাকায়। যাতায়াতের সুবিধার জন্য হালিশহরের কে-ব্লকে লাকী আক্তারের বাসায় কয়েকজন বন্ধু মিলে সাবলেট ভাড়া নেন। একই ভবনের নিচে লাকীর বুটিকস ও টেইলার্সের দোকান ছিলো। মুলত সাবলেট বাসায় থাকতে গিয়ে লাকীর সাথে সম্পর্কে জড়ান নুর। ২০১৫ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৭ সালে একটি ছেলে ও ২০১৮ সালে একটি মেয়ে জন্ম নেয় নুর-লাকির সংসারে। বিয়ের পর টেইলার্সের দোকান বন্ধ করে দুজনে মিলে একটি খাবারের দোকান খোলেন। নুর দোকান দেখোশোনা করতেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিয়ের পর থেকে লাকী তাকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। নতুন জামা পরে কখনো বাইরে যেতে দিতেন না। প্রায় সময় রাতের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিতেন। মাঝখানে একবার ভারতে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ পেলেও যেতে পারেননি। দুটি সন্তানের দিকে তাকিয়ে সবকিছুই নিরবে সহ্য করতেন নুর।
ঘটনার দিন (১৮ মার্চ ২০১৯) দুপুরে দোকানে শুয়েছিলেন নুর। কারণ তিনি একটু অসুস্থ ছিলেন। এ সময় তাকে বেশ বকাবকি করেন লাকী। রাতে দোকানের পেছনে কারখানায় (দোকানের খাবার তৈরির ঘর) খাবার খেতে বসেছিলেন। এ সময় লাকী এসে তাকে ফের গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সামনে থাকা সব খাবার ফেলে দেন। দুজনের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে একটি গাছের বাটাম দিয়ে নুরকে আঘাত করেন। রাগের বশে কারখানায় থাকা মসলা বাটার হামানদিস্তা (লোহারপাত্র) দিয়ে লাকীর মাথায় পর পর দুটি আঘাত করেন নুর। এতে লাকী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর লাকীর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে লাকীর আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে নুর পালিয়ে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, নুর একা লাকীকে হত্যা করেছে। হত্যার দুইদিন পর বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে যায়। ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট