চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দুদকে হাজিরা দিতে গিয়ে ভুড়িভোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায়

চবি শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা , চবি

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

দুদকে হাজিরা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ভুড়ি ভোজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টিকে আপ্যায়ন ব্যয় হিসেবে দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগার থেকে অর্থ উঠিয়ে নিতে অনুমোদনও দিয়েছেন দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজিস্ট্রার এবং হিসাব নিয়ামক। পূর্বকোণের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, গত ২২ আগস্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে জামান হোটেল এন্ড বিরিয়ানি হাউসে দুপুরের

খাবার খান শিক্ষক-কর্মকর্তারা। যার বিল বাবদ ৫ হাজার ৩৯৬ টাকা খরচ দেখানো হয়। হোটেল থেকে প্রদত্ত ভাউচারে ফ্রাইড রাইস, চার পদের মাছ, দুই পদের ভর্তা, মুরগি এবং সবজির নাম রয়েছে। এতে ফ্রাইড রাইসের দাম রাখা হয়েছে ১ হাজার টাকা, কোরাল মাছের দাম রাখা হয়েছে ৯২০ টাকা, রূপচাঁদা মাছের দাম ৮০০ টাকা, ইলিশ মাছের দাম ২৫০ এবং রুই মাছের দাম রাখা হয়েছে ৯৬০টাকা। এছাড়া শুঁটকি ভর্তা এবং মিক্স ভর্তা বাবদ যথাক্রমে ১০০ এবং ৬০০ টাকা দাম রাখা হয়েছে। তাছাড়া সবজি বাবদ ১২০ টাকা, চিকেন বাবদ ১৬৫ এবং মিনারেল ওয়াটার (বড়) বাবদ ৪৮১ টাকা খরচ হয়েছে।
এদিকে, হিসাব নিয়ামক দপ্তর থেকে পাওয়া একটি নথিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘গত ২২ আগস্ট দুদক কার্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুদক কর্তৃক চবি শিক্ষক কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা আহ্বান করা হয়। সভা চলাকালীন সময়ে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর দুপুরের বিল বাবদ ৫ হাজার ৩৯৬ টাকা খরচ হয়েছে।’ নথিতে কর্মচারীদের কথা উল্লেখ থাকলেও ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মচারীকে ডাকেননি দুদক। শুধুমাত্র সাবেক প্রক্টরসহ তিন অনুষদের ডিন এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ডাকা হয়।

এদিকে বিলটি পাস করিয়ে নিতে স্বাক্ষর করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ এবং ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক ফরিদুল আলম। শুধু তাই নয় বিলটি অনুমোদন করা যেতে পারে বলে এমন মত দিয়ে বিলে সীল এবং স্বাক্ষর করেছে উপ হিসাব নিয়ামক মো. আমিনুর রহমানও। বিল নিয়ে এমন নয় ছয়ের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের মধ্যে খোন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক দুই জনেরই নাম ছিল দুদকের তালিকায়। তারা গত ২২ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির তাদের বক্তব্যও পেশ করেছেন।

বিষয়টি স্বীকার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক মোঃ ফরিদুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট আমাদেরকে দুদক দেখা করতে বলেছিল। আমরা অফিসায়ালি দেখা করেছিলাম। আমাদেরকে সিএ হিসেবে, রেজিস্ট্রার হিসেবে ডাকানো হয়েছিল। একই দিন প্রক্টর, ডিনরাও ছিলেন। তিনটা পর্যন্ত থাকতে হয় আমাদের। সবাই ক্ষুধার্ত থাকায় জামান হোটেলে খাওয়া দাওয়া করেছি। সব মিলে ৫ হাজারের মত বিল এসেছিল। আমরা বিষয়টি উপাচার্য ম্যামকে জানালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে টাকা দিতে সম্মতি দেন। তবে টাকাটা এখনো তোলা হয়নি।’

এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০ হাজার কোটি টাকা খেয়ে ফেলতাম তখন কোন নিউজ হতো না। কারণ আমরা সবাই মিলে তা ঠিক করে ফেলতাম।’ ভাউচার বিলে দুদকের সভার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আদৌও দুদকের সভা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিলটা আমার পিয়ন করেছে। তাছাড়া বিষয়টিকে সভা বললেও অসুবিধা তো নাই।’ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার পূর্বকোণকে বলেন, ডিনরা কোন সভা করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে। আমিও ভেবেছিলাম বিষয়টি এমন কিছু। কিন্তু আজ শুনলাম তারা দুদকে গিয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমি স্থগিত রাখতে বলেছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪২ কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ১৯ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক প্রক্টর, ডিনসহ ৪৭ জনকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

 

পূর্বকোণ/ মিজান

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট