চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডা. আকাশের আত্মহত্যা প্ররোচনা

স্ত্রী ডা. মিতু ও বন্ধু মাহবুুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

আদালত প্রতিবেদক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ডা. মোস্তফা মোর্শেদ আকাশের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতু (২৯), মিতুর বন্ধু ডা. মাহবুবুল হকসহ (২৮) ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অপর তিন অভিযুক্ত হলেন, ডা. মিতুর বাবা আনিছুল হক চৌধুরী (৫৫), মা মোছাম্মৎ শামীম শেলী (৪৯) ও ছোটবোন সানজিলা হক চৌধুরী ওরফে আলিশা (২১)। মিতুর বন্ধু ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকা প্রবাসী প্যাটেলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে আপাতত মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। তবে, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর জিআরও শাখায় চার্জশিটটি দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার এসআই আবদুল কাদের।

এবছর ৩১ জানুয়ারি (৩০ জানুয়ারি দিনগত রাত) রাত ৪.৫০ থেকে ভোর সোয়া ৫ টার মধ্যে চান্দগাঁওস্থ নিজ বাসার বাথরুমে শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেন ডা. আকাশ। ইনজেকশন পুশ করার পূর্ব মুহূর্তে নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে স্ত্রী মিতুকে উদ্দেশ্য করে ‘ভালো থেকো আমার ভালবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে” স্ট্যাটাস দেন। স্ত্রী মিতুর পরকীয়া ও মিতুর পরিবারের সদস্যদের মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আকাশ আত্মহত্যা করেছে বলে মিতুর পরিবারের দাবি। এ ঘটনায় আকাশের মা জোবেদা খাতুন এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি মিতুসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অপর তিন/চারজন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশ মিতুকে ১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতে হাজির করার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৮ আগস্ট তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। অপরদিকে, মিতুর মা-বাবাসহ অপর ৪ অভিযুক্ত পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য চার্জশিটে আবেদন করা হয়েছে। মিতুর বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে, তারা নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বলে উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। ডা. মাহবুবুল আলম নগরীর উত্তর পতেঙ্গার হাফেজ ফার্সি আহমেদ বাড়ির জনৈক মো. আলী আজগরের ছেলে।
ভুক্তভোগী ডা. আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার মোজাহের বাড়ির মরহুম আবদুল সবুরের ছেলে। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, মিতুসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দ-বিধির ৩০৬ ধারায় অভিযোগ এনে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, মিতুর বন্ধু প্যাটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে। পরে নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের দুষ্কর্মের ফলে ডা. আকাশ মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ডা. আকাশের উপর মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে আকাশকে আত্মহত্যা প্ররোচনা দেয়। তাই দ-বিধির ৩০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হল।

এদিকে মামলার বাদি, আকাশের মা জোবেদা খানম পূর্বকোণকে বলেন, আমার ছেলের সাথে মিতুর ২০০৯ থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেম করেই বিয়ে করেছে দুজন। এরপরও অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে আমার ছেলের জীবন বিষাক্ত করে আমার ছেলেকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে মিতু ও তার পরিবার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট