চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

রামুতে মাদ্রাসায় গুলি হামলা, ৮ ছাত্র আহত

কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধের জের

নিজস্ব সংবাদদাতা

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

জড়িতদের বিরুদ্ধে ইউএনও
প্রণয় চাকমার মামলার নির্দেশ
হ রামু

রামু চাকমারকুল জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিষ্ঠানে গুলি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া মারধরে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীসহ ৮ জন আহত হয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় চাকমা ও রামু থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনা চলাকালে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটি ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ ঘটনায় মাদ্রাসা এবং আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ঘটনাস্থলে যান। ইউএনও প্রণয় চাকমা বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় মামলা করার জন্য তিনি তাৎক্ষণিক ওসিকে নির্দেশ দেন।
হামলার শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তাসকিন হাসান তকি, মো. আব্দুল্লাহ, মো. সোহাদ, মো. জিসান, মো. রায়হান, মো. তৈয়ব উল্লাহ, সাইফুল ইসলাম ও মো. ইয়াছিন জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদ্রাসার পেছন (পূর্বদিক) থেকে আকস্মিকভাবে মাদ্রাসা লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু হয়। এসময় মুখোশ পরা ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী মাদ্রাসায় প্রবেশ করে তাদের মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মাদ্রাসার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মাদ্রাসায় বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর শুরু করে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের গুলিবর্ষণ ও মারধরের ঘটনা খুবই অমানবিক। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ধরনের ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানে সকল কার্যক্রম নির্বিঘেœ চলমান থাকবে। কেউ কোন প্রকার ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
রামু থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনা ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় জড়িতরা কোনভাবেই রেহায় পাবেনা। তিনি মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পুলিশি সহায়তা বা নিরাপত্তা দেয়ার আশ^াস দেন।

মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মাদ্রাসা থেকে ইতোপূর্বে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী নুরুল আলম, সাহাব উদ্দিন এবং ছলিম উল্লাহর নেতৃত্বে এ গোলাগুলি, হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা আগের দিন রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর মসজিদের মাইক নিয়ে জোরপূর্বক মাদ্রাসার সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এমনকি কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করলে তাদের মারধরের হুমকি দেয়া হয়। এসময় মসজিদে আসা স্থানীয় মুসল্লি, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি। তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে এ চক্রটি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অচল করার হীন উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার প্রধান প্রবেশ গেইটে তালা দিয়েছিলো। তবে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ ও স্থানীয় জনতার সহায়তায় তা প্রতিহত করা হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির চলমান সংকট নিরসনে সংসদ সদস্য আলহাজ সাইমুম সরওয়ার কমল দুইজন আলেমের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও তার সহযোগীরা তদন্তকাজে কোন সহযোগিতা না করে উল্টো প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, ঐহিত্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এভাবে গোলাগুলি, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছে। একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট