চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ উদ্বোধন করবেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

সব বাধা পেরিয়ে আলোর মুখ দেখলো সুইমিং পুল : মেয়র

স্পোর্টস ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সুইমিংপুলের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। সুইমিং পুলের নীল জলে ঢেউ তোলার অপেক্ষায় নগরীর সাঁতারপ্রেমীরা। সকাল দশটায় চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে নির্মিত এ সুইমিংপুলের উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহ্সান রাসেল এম.পি। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন চসিক মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। আর এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। আজ থেকেই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিং পুলের নীল জলে ঢেউ তুলতে পারবেন নগরীর সাঁতারপ্রেমীরা। উদ্বোধনের আগে গতকাল পর্যন্ত এ সুইমিং পুলে সাঁতার শিখতে একহাজারের বেশি ফরম বিক্রি হয়ে গেছে। এতেই বোঝা যায় নগরবাসী এ সুইমিং পুলের জন্য কতখানি প্রতীক্ষায়।

তবে এ সুইমিংপুল নির্মাণ শুরুর পর থেকে এসেছে নানা প্রতিবন্ধকতা। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এ সুইমিংপুল। ২০১৭ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে আউটার স্টেডিয়ামের খেলার জায়গা নষ্ট হবে বলে বিতর্ক উঠে। এরপর শুরু হয় হামলা ও মামলা। মামলা করে এর কাজও বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সব প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে দিয়ে নগরপিতার হাত ধরেই স্বপ্নটা অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আর তাই উদ্বোধনের আগের দিন সুইমিং পুল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন।
পূর্বকোণকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অবশেষে নগরবাসীকে এ সুইমিং পুল উপহার দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামালের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এ সুইমিং পুল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর একটি পক্ষ নানাভাবে এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছিল। এসময় হামলা ও মামলারও শিকার হতে হয়। তবে নগরবাসীবাসীকে সাথে নিয়ে সব বাধা পেরিয়ে আজ আলোর মুখ দেখেছে এ সুইমিং পুল। এজন্য তিনি নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান।

ইতিমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত এ সুইমিং পুল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য সিজেকেএস সাঁতার কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি সাঁতার কমিটির সভাপতি এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মাহবুবের নাম উল্লেখ করে বলেন, সুইমিংপুল পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণসহ সকল কাজ উনারা তদারকি করবেন। তিনি বলেন সুইমিং কমপ্লেক্সে ২ জন নারী প্রশিক্ষক, ২ জন পুরুষ প্রশিক্ষকসহ ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা সাঁতার জানে না তাদের জন্য বিভিন্ন কোর্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী ও পুরুষদের সাঁতার শেখার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, তবে এর আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সাঁতার শেখাবো। তিনি বলেন, টাকার জন্য কেউ সাঁতার শিখতে পারবে না এমনটা হতে দেব না। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোররা আবেদন করলে অবশ্যই তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, এতদিন মানসম্পন্ন সুইমিং পুলের অভাবে এ জনপদের সাঁতারুরা পিছিয়ে পড়ছিল। এখন সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাঁতার ইভেন্টটি জনপ্রিয় করা হবে। নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এখন থেকে দক্ষ সাঁতারু তৈরি করা হবে। যারা জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক টুর্নামেন্ট গুলোতে অংশ নিয়ে নগরবাসীর মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। একই সাথে আগামী প্রজন্ম যেন সাঁতারে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন তিনি।
সিজেকেএস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষানবিশ ক্যাটাগরিতে ছেলে-মেয়েদের ১ মাসের কোর্সে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা। ১ ঘণ্টার ক্লাস হবে সপ্তাহে ৪ দিন। মাসের যেকোনো দিন ভর্তি হওয়া যাবে। প্রতি ব্যাচে সর্বোচ্চ ৩০ জন সাঁতারু অংশ নিতে পারবে। বিভিন্ন ইভেন্টের জাতীয় দল ও চট্টগ্রাম জেলা দলের সাঁতারুরা সপ্তাহে ৪ দিন দৈনিক এক ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারবেন। জনপ্রতি প্রতিঘণ্টা ২০০ টাকা।

সাঁতার জানা শৌখিন সাঁতারুদের প্রতি ঘণ্টা ৪০০ টাকা, এককালীন মাসিক মেম্বারশিপ ৮ হাজার টাকা, ছয় মাসের মেম্বারশিপ ২০ হাজার টাকা। সপ্তাহে ৪ দিন সাঁতার কাটতে পারবেন তারা। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পুরুষরা, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নারীরা, এরপর এক ঘণ্টা করে পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে এবং রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শুধু পুরুষরা (যারা সাঁতার জানে) সুইমিং পুলটি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুইমিংপুলটি। নগরের আউটার স্টেডিয়ামের পাশে নির্মিত এই সুইমিং কমপ্লেক্সে পুলের আয়তন ১হাজার ১০০ বর্গ মিটার। যার দৈর্ঘ ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার। রয়েছে ৮টি লেন। প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পুলের গড় গভীরতা ২ মিটার। আন্তর্জাতিকমানের পুলটির মূল প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে। যার পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাশে রয়েছে গ্যালারি। যেখানে বসতে পারবে দেড় হাজার দর্শক। নিচে রয়েছে ডিপ টিউবওয়েল, ফিল্টেশন প্ল্যান্ট এবং ২৫০ কেভি সাবস্টেশন।

এছাড়া পশ্চিম পাশে রয়েছে ওয়াটার রিজার্ভার। সুইমিংপুলের পানি প্রসেসিং সিস্টেমে রয়েছে- ডিপ টিউবওয়েল থেকে প্রথমে পানি যাবে রিজার্ভারে, এরপর ফিল্টেশন প্ল্যান্ট হয়ে বিশুদ্ধ পানি যাবে সুইমিংপুলে। পুল থেকে আবার ওভারফ্লো হয়ে ড্রেনের মাধ্যমে সে পানি যাবে বেনচিং ট্যাংকে। পরে সে পানি আবার রিসাইক্লিং হয়ে যাবে পুলে। পুলের পশ্চিম পাশে রয়েছে ড্রেসিং রুম, অফিস কক্ষ এবং টয়লেট ব্লক। সবমিলিয়ে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে এই সুইমিংপুলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট